ঢাকায় 'হানি ট্র্যাপে' খাদ্য নিয়ন্ত্রক, ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ
ঢাকায় আবারও আলোচনায় 'হানি ট্র্যাপ'। এবার এর শিকার হয়েছেন নোয়াখালী জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। দাওয়াত রক্ষা করতে গিয়ে তিনি জিম্মি হয়ে মারধর ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন এবং ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পান।
জানা গেছে, সংগীতপ্রেমী সরকারি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের পরিচয় হয় ঢাকার মডেল তনয়া হোসেনের সঙ্গে, যার প্রকৃত নাম নাজমুন নাহার সুখী (২৮)। তাদের সম্পর্কের একপর্যায়ে তনয়ার বড় বোন তানিশা (আসল নাম কামরুন নাহার আঁখি, ৩২) জাহাঙ্গীরের কাছে ৫ লাখ টাকা সহায়তা চান। সহানুভূতিশীল হয়ে তিনি সেই টাকা দেন।
এরপর ১৯ এপ্রিল তনয়া জাহাঙ্গীরকে তাদের ঢাকার বাসায় দাওয়াত করেন। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল তনয়া-তানিশাসহ চক্রের আরও দুই সদস্য। জাহাঙ্গীর বাসায় ঢোকার পরই তাকে বেঁধে ফেলে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে জাহাঙ্গীরের কাছে এক কোটি টাকা দাবি করা হয়।
জিম্মি অবস্থায় জাহাঙ্গীর পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন। এরপর এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ৫২ লাখ টাকা এবং বিকাশে ৮ লাখ টাকা পাঠানো হয়। ৬০ লাখ টাকা পাওয়ার পর চক্রটি জাহাঙ্গীরকে বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে এবং হুমকি দেয়— কাউকে এ ঘটনা জানালে এসব ছবি-ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
রাতে চক্রটি জাহাঙ্গীরকে নিয়ে গাড়িতে করে বেরিয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন পথ ঘুরে তাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ফেলে যায় বাড্ডার এক অন্ধকার গলিতে। বিপর্যস্ত জাহাঙ্গীর একজন রিকশাচালকের সহায়তায় আশ্রয় নেন একটি হোটেলে। পরে তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ভাটারা থানায় মামলা করেন।
এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল পুলিশ তনয়াদের বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে তনয়া, তানিশা, সাফাত ইসলাম ও রুমানা ইসলামকে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, বাকি টাকার একটি অংশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে এবং কিছু টাকা দিয়ে আইফোন কেনা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সবাইকে এ ধরনের ফাঁদে পড়ার হাত থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ হলে পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।