বলাৎকারের পর শিশু ছোটনকে হত্যা রহস্য উদঘাটন
বেলাল হোসেন রিয়াজ, সংবাদদাতা -নাঙ্গলকোট, (কুমিল্লা) -
নাঙ্গলকোটে নিখোঁজের একদিন পর শাখাওয়াত হোসেন ছোটন (৭) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। ছোটনকে ডেকে নেওয়া সাইফুল (১৬) বলাৎকারের পর তাকে গলা টিপে হত্যা করে লাশ একটি মৎস্য প্রজেক্টের পুকুর ফেলে দেয়।
শুক্রবার (২মে) কুমিল্লার শিশু আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সাইফুল এ স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।
হত্যাকারী সাইফুল নিজেই বৃহষ্পতিবার (১মে) সকালে ছোটনের পিতা আনোয়ার হোসেন হানিফের নিকট একটি মৎস্য প্রজেক্টে ছোটনের লাশ ভেসে থাকার কথা জানায়। এর একদিন আগে বুধবার (৩০এপ্রিল) দুপুর থেকে শাখাওয়াত হোসেন ছোটন নিখোঁজ ছিল।
ছোটন উপজেলার পেড়িয়া ইউনিয়নের কাজী জোড়পুকুরিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের হানিফের ছেলে। হত্যাকারী সাইফুল ও একই ইউনিয়নের এবং একই গ্রামের মাহবুবুল হকের ছেলে। ছোটনের পিতা বাদি হয়ে সাইফুলকে আসামী করে নাঙ্গলকোট থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বৃহষ্পতিবার ( ১ মে) সকালে ছোটনের লাশ উদ্ধারের পর সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) শুভ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ছোটনের চাচা মীর হোসেন জানান, বুধবার (৩০এপ্রিল) দুপুর থেকে ছোটনকে খুঁজে না পেয়ে তার খেলাধুলার সাথীদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, ওইদিন দুপুর তিনটার দিকে একই গ্রামের মাহবুবুল হকের ছেলে সাইফুল (১৬) ছোটনকে শ্রীফলিয়া বাজারের দিকে যায়। এনিয়ে সাইফুলকে জিজ্ঞাসা করলে, সাইফুল জানায়, ছোটন একই গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির মাদ্রাসা পর্যন্ত যাওয়ার পর তার সাথে আর যায়নি। পরে ওইদিন বিকালে ৫টার পর থেকে তাকে বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় রাত ৮টার পর ছোটনের খোঁজে এলাকার সর্বত্র মাইকিং করা হয়। রাতে নিখোঁজ ছোটনের বাড়িতে গ্রামবাসীসহ সাইফুলের পরিবারের অন্যান্য লোকজন আসলেও সাইফুল আসেনি। এর পর থেকে ছোটন হত্যার ঘটনায় সবার সন্দেহের তীর সাইফুল দিকে চলে যায়। বৃহষ্পৃতিবার (১মে) সকালে সাইফুল জানায়, ছোটনের লাশ কাজীজোড়পুকুরিয়া গ্রামের মাওলানা সাইফুল ইসলামের মৎস্য প্রজেক্টের পুকুরে ভাসতে দেখেছেন। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ছোটনের লাশ সনাক্ত করেন। এক পর্যায়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
মীর হোসেন আরো জানান, আমার ভাতিজা ছোটনের শরীরের পশ্চাদ্দেশে লাল আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তার পরনের প্যান্ট অর্ধেক খোলা রয়েছে এবং শরীরের কোন কাপড় ছিল না। যে মৎস্য প্রজেক্টের পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সে মৎস্য প্রজেক্টে মাত্র ৩ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। ৩ ফুট পানির গভীরতায় সে কিভাবে মারা যায় ?
নাঙ্গলকোট থানা উপ-পরিদর্শক (এস আই) শুভ জানান, শিশু শাখাওয়াত হোসেন ছোটন হত্যার ঘটনায় তার পিতা আনোয়ার হোসেন হানিফ সাইফুলকে আসামী করে থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় সাইফুলকে আটক করা হয়। শুক্রবার (২মে) কুমিল্লা শিশু আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট সাইফুল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে শিশু ছোটনকে বলাৎকার করার পর চিৎকার করলে তাকে গলা টিপে হত্যা করে মৎস্য প্রজেক্টে রেখে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। আসামী সাইফুলকে আদালতের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।