বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত, পাঁচ সপ্তাহে পুঁজিবাজারে বড় ধাক্কা
টানা পাঁচ সপ্তাহের দরপতনে বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার, বিনিয়োগকারীদের হতাশা চরমে
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের শেয়ারবাজার যেন এখন বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নভঙ্গের আরেক নাম। টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে সূচকের ধারাবাহিক পতনে মুখ থুবড়ে পড়েছে শেয়ারবাজার। একের পর এক শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা কেউ কেউ পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন, কেউবা হতাশায় গায়ে জড়াচ্ছেন কাফনের কাপড়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত পাঁচ সপ্তাহে বাজার থেকে উবে গেছে প্রায় ২১ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। শুধু গত সপ্তাহেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। এই সময়ে বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৯৪টি কোম্পানি। এর মধ্যে ২৩০টির শেয়ারদর কমেছে, ১৪১টির বেড়েছে এবং ২৩টির কোনো পরিবর্তন হয়নি—যা বাজারে মন্দাভাবের চিত্র স্পষ্ট করে।
সপ্তাহের শুরু কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও বুধবার ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার খবরে বাজারে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। একদিনেই ডিএসইএক্স কমে ১৪৯ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধনে যুক্ত হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি। তবে বৃহস্পতিবার সূচকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানো দেখা গেলেও তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। দিনশেষে সূচক বাড়ে ৯৯ পয়েন্ট।
সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স কমেছে ১৫.৬৪ পয়েন্ট (০.৩২%), ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ১৯.৯১ পয়েন্ট (১.৮২%) এবং ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২.৪৩ পয়েন্ট।
বাজারের এই পতনের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভও প্রকাশ পায় রাস্তায়। গত বৃহস্পতিবার মতিঝিলে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীদের একাংশ। তারা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং আইসিবি চেয়ারম্যান আবু আহমেদের অপসারণ দাবি করেন।
তবে দরপতনের মাঝেও বাজারে কিছুটা লেনদেন বৃদ্ধি দেখা গেছে। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ৪৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩৭.০৪% বেশি।
লেনদেনে শীর্ষে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক—প্রতিদিন গড়ে ৩৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার লেনদেন, যা মোট লেনদেনের ৭.৯০%। এরপর ছিল বিচ হ্যাচারি ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। শীর্ষ দশে আরও রয়েছে—এনআরবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, লাভেলো, কেডিএস এক্সেসরিজ, উত্তরা ব্যাংক এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
পাঁচ সপ্তাহের এ ক্ষয়ক্ষতির পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রশ্ন—এই পতনের শেষ কোথায়? এখন প্রয়োজন কার্যকর নীতিগত হস্তক্ষেপ ও আস্থার পুনরুদ্ধার।