পিংক সল্ট সত্যিই কি উপকারী? যা বলছেন পুষ্টিবিদ
দৈনন্দিন জীবনে লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি এমন উপাদান, যা ছাড়া ঝাল কিংবা মিষ্টি, কোনো খাবারের স্বাদই পূর্ণতা পায় না। বরং লবণ যোগ করার ফলে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়। আবার এটি শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের লবণ পাওয়া যায়। এরমধ্যে হিমালয়ান পিংক সল্ট খুবই জনপ্রিয়। এ লবণ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা, এটি সাধারণ লবণের থেকে অধিক স্বাস্থ্যকর, উপকারিতাও অনেক। কিন্তু আসলেই কী তাই? এ ব্যাপারে কথা বলেছেন ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী। এবার তাহলে পিংক সল্ট সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
এ পুষ্টিবিদ জানিয়েছেন, পাকিস্তানের খেওড়া সল্ট মাইন থেকে তোলা হয় হিমালয়ান পিংক সল্ট। এটি হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম লবণের খনি। এই লবণ স্বাভাবিকভাবেই গঠিত ও কোনো ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত করা হয় না। এই লবণের রং গোলাপি আসায় এতে বিদ্যমান আয়রন অক্সাইড থাকে। এতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকায় এটিকে অনেকেই স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন।
খনিজ উপাদান: সাধারণত সাধারণ লবণ ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড দিয়ে গঠিত। এ কারণে এটি বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান বাদ দেয়া হয়। আর এতে আয়োডিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যোগ করা হয়। যা থাইরয়েড হরমোনে গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে বলা হয়ে থাকে, পিংক সল্টে প্রায় ৮৪ ধরনের খনিজ উপাদান থাকে। যদিও এসবের অধিকাংশই ক্ষুদ্র পরিমাণে থাকে। ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংযোজন: সাধারণ লবণ বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশোধিত করা হয়। এ কারণে সাধারণ লবণে সোডিয়াম ক্লোইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই লবণে অ্যান্টি-কেকিং এজেন্ট (যেমন ক্যালসিয়াম সিলিকেট) যোগ করা হয়। এটি যোগ করা হয় এ কারণে যে, যাতে লবণ জমাট বাঁধতে না পারে।
আর পিংক সল্ট তুলনামূলকভাবে কম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই লবণে কোনো ধরনের রাসায়নিক সংযোজনও থাকে না। এ কারণে এই লবণ প্রাকৃতিক বলে মনে করা হয়।
স্বাদ ও গঠন: পিংক সল্টের স্বাদ সাধারণ লবণের থেকে হালকা কম লবণাক্ত এবং এটি কিছুটা মিষ্টি অনুভূতির। পিংক সল্ট মোটা দানার হওয়া ব্যবহারের আগে অনেক সময় গুঁড়া করে নেয়ার প্রয়োজন হয়।
পিংক সল্টের উপকারিতা:
রক্তচাপ: সোডিয়ামের পরিমাণ পিংক সল্টে তুলনামূলক কম থাকায় এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে লবণের পরিমাণ কমানো এটিই ভালো উপায়।
পানির ভারসাম্য: সোডিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। যা হাইড্রেশন ঠিক রাখতেও কার্যকরী।
পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী: ক্ষেত্র বিশেষ পিংক সল্ট হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গ্যাসট্রিক-অ্যাসিড উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে পারে। আপনার খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে।
কোনটি খাবেন: পিংক সল্টে যদিও খানিকটা অতিরিক্ত খনিজ উপাদান রয়েছে, তবে তার পরিমাণ এতটাই কম যে, সেসব থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায় না। পিংক সল্টে বিদ্যমান খনিজ উপাদান চাহিদা থেকেই পূরণ করা যায়। এই লবণে আয়োডিনের পরিমাণও কম থাকে। এ কারণে যারা নিয়মিত আয়োডিনযুক্ত লবণ খান না, তাদের পিংক সল্ট খাওয়া হলে আয়োডিনের ঘাটতি থেকে যাবে। আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া ভালো। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলে শুধু পিংক সল্ট নয়, যেকোনো ধরনের লবণই সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। পিংক সল্টে খনিজ উপাদান কিছুটা বেশি ও কম প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়ায় এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে বেশি দাবি মোটেও ঠিক নয়। তবে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।