"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই" কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী মান্না দে এর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটি শুনলে যার মুখটি এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনি মান্না দে।
উপমহাদেশের কিংবদন্তি তুল্য এ শিল্পী বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ভাষায় অজস্র গান উপহার দিয়ে অমরত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন লাখো-কোটি শ্রোতার হৃদয়ে।
পুরো নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। মান্না দে নামেই তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। ১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতায় জন্ম গ্রহন করেন।
জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমিতো নই, তীর ভাঙা ঠেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়, এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, এ জীবনে যত ব্যথা পেয়েছি, সেই তো আবার কাছে এলে, আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো, ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি ভালবাসবে, তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছ, যদি কাগজে লেখো নাম, আমি ফুল না হয়ে কাঁটা হয়েই বেশ ছিলাম, কত দিন দেখিনি তোমায়, খুব জানতে ইচ্ছে করে, মান্না দের কণ্ঠে দরদ মিশিয়ে গাওয়া এ গান আজও শ্রোতাকে নিয়ে যায় চির বসন্তের কল্পলোকের অন্য এক জগতে।
কফি হাউসের গানটির কথাই ধরা যাক; কফি হাউস সিরিজের বিখ্যাত এ গানটির সুরকার সুপর্নকান্তি।
গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারকে দিয়ে জোর করেই আড্ডা নিয়ে একটি গান লিখিয়ে নিয়েছিলেন সুপর্ন। পুত্রসম সুরকারের আবদার ফেলতে পারেননি গৌরীপ্রসন্ন। সুর শুনে মনে ধরে গেল মান্না দে'র। তারপরেই রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত। আর সেই গানটিই হলো ইতিহাস।
ছোটবেলায় তিনি বাড়িতেই পেয়েছিলেন কাকা সংগীতাচার্য অন্ধ শিল্পী কৃষ্ণচন্দ্র দে কে। হাতেখড়ি থেকে ধ্রুপদ শিক্ষা সব তাঁর হাতেই। রেওয়াজের সময় তিনি আধুনিক গান না করে মন দিয়ে সরগম আর রাগ-রাগিণীর চর্চা করতেন।
১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তামান্না’ চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে মান্না দে’র অভিষেক ঘটে। রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান গেয়েছেন এই কিংবদন্তি।
৬০ বছরের সঙ্গীত জীবনে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী, ‘পদ্মবিভূষণ’এবং ‘দাদা সাহেব ফালকে’ খেতাবসহ অসংখ্য পুরস্কারে উঠেছে তাঁর হাতে।
২০০৪ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও ডি-লিট সম্মাননা লাভ করেন মান্না দে।
কাকার বেঁধে দেওয়া রেওয়াজ রীতি আর নিজের নিয়মনিষ্ঠায় মান্না দে আজীবন শিল্পীদের কথিত উচ্ছৃঙ্খল বেপরোয়া ও খামখেয়ালির জীবনের স্বাদ নেননি।
১৯৫৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চলের কেরালার মেয়ে সুলোচনা কুমারনকে বিয়ে করেন মান্না। আদর করে তাঁকে সলু বলে ডাকতেন। বলতেন তাঁর সব প্রেমের গানই সুলুকে ভেবে গাওয়া। তাঁদের সংসারে শুরোমা ও সুমিতা নামে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
সুলোচনা প্রয়াত হন ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে। মুম্বাই ছেড়ে মান্নাও চলে যান মেয়ের কাছে ব্যাঙ্গালোরে। ২৪ অক্টোবর ২০১৩, ভারতের বেঙ্গালুরুতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর সুরের ক্যানভাসে শ্রোতাদের নিয়ে গেছেন অন্য এক ভালবাসার জগতে, যেখানে আজীবন বসবাস করতে চাইবে যে কেউ।