তীব্র গরমে স্যালাইন নয়, পানি-শরবতেই মিলবে স্বস্তি

ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে চলছে তাপদাহ। গরমের প্রকোপে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তীব্র তাপদাহে একদিকে যেমন রোদের তাপ শরীরকে ক্লান্ত করে দিচ্ছে, তেমনি ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় পানি ও খনিজ উপাদান। এর ফলে অনেকেই হঠাৎ দুর্বলতা, মাথাব্যথা, শরীরচর্চায় অক্ষমতা এমনকি ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন।

এমন তীব্র গরম বা তাপদাহে মানুষ দ্বিধায় পড়ে যায় যে কী খাওয়া বা পান করা উচিত? স্যালাইন খাব, নাকি গ্লুকোজ? নাকি শুধু পানি বা শরবতই যথেষ্ট? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা কনটেস্টে এনজিওর পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাতের।  তিনি জানান এই সময়ে সঠিক পানীয় নির্বাচনই পারে শরীরকে সুস্থ রাখতে।এ বিষয়ে তিনি বেশ কিছু পরামর্শ দেন, যা তুলে ধরা হলো- 

১। পানি: তীব্র গরমে শরীরের পানিস্বল্পতা কমাতে ও শরীরকে সুস্থ রাখতে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। আর পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি হতে হবে। সাধারণত এই গরমে শরীরকে সতেজ রাখতে খাবার পানিই যথেষ্ট। প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে,গরমের মধ্যে পরিমাণ বাড়াতে হবে। 

২। স্যালাইন: এটি একটি  মেডিক্যাটেইড খাবার। তীব্র গরম পরলেই যে ঘন ঘন স্যালাইন খাওয়া হবে,  এটি খুবই ভুল ধারণা। যদি কারো গরমে অতিরিক্ত বমি হয়, ডায়রিয়া হয় ও প্রচুর ঘামে শরীর দুর্বল হয়ে পরে, সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে স্যালাইন খাওয়া করা। অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে  রক্তের সোডিয়াম, পটাশিয়াম লেভেল বাড়িয়ে দিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। অকারণে স্যালাইন খাওয়া শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, তাই সাবধান।

৩। ফলের শরবত: গরমে ফলের শরবত পান করা অনেকের অভ্যাস। বিশেষ করে মৌসুমি ফল যেমন—তরমুজ, লেবু, কমলা বা বেল—এসবের রস প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে পুষ্টিবিদের পরামর্শ, শরবতে চিনি ও লবণ না মিশিয়ে খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শরবত হচ্ছে দ্রুত শরীরে গ্লুকোজ লেভেল বাড়িয়ে দেয়। যা ডায়াবেটিক রোগী ও অন্যান্য কিছু রোগের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিনি ও লবণ ছাড়া টক জাতীয় ফলের রস পান করতে পারেন । 

৪। গ্লুকোজ: অনেকে গরমে গ্লুকোজ মিশিয়ে পানি পান করতে অভ্যস্ত। পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাত বলেন, গ্লুকোজ আসলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এটি প্রয়োজন হয় কেবল রক্তে শর্করার ঘাটতি বা প্রেসার কমে গেলে। গ্লুকোজ পানিতে যেসব চিনি পাউডার ব্যবহার করা হয় এটি রক্তে চিনির পরিমাণ  বাড়িয়ে দেয় যা ডায়বেটিস সহ কোলেস্টেরলের রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষও যদি গরমে নিয়মিত গ্লুকোজ পানি পান করে তাহলে ক্ষতিকর  হবে। কারণ, এই শর্করা চর্বিতে পরিণত হয়। এটি হার্টের রোগ ও ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী। অতএব, গ্লুকোজ প্রস্তুতকারক কোম্পানির চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

সবশেষ পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাত পরামর্শ দেন,  গরমে হাইড্রেশন বজায় রাখতে চাইলে নিয়ম পানি পান করতে হবে, ঘরের বাইরে বের হলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার ও  হালকা ও সুতি পোশাক পরতে হবে। আর ঠান্ডা জায়গায় থাকার চেষ্টা করাই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। বাজারে ছড়িয়ে থাকা কোমল পানীয় পানের বিষয়ে সতর্ক করেন এই পুষ্টিবিদ। তিনি বলেন এসব কোমল পানীয় শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং তাপদাহে কোমল পানীয় পান করলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।