ওষুধি গুণসম্পন্ন নিম গাছ
নিম গাছ একটি উপকারী উদ্ভিদ। মানুষের নানাবিধ উপকারে গাছটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রকৃতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বাড়িতে নিম গাছ রোপণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই পরিবেশবিদরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অথচ আমাদের অবহেলায় গাছটি দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।
নিমের ইংরেজি নাম Neem, বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica এবং পরিবার Maliaceae। এটি একটি ওষুধি গাছ। নিমকে নিম্ব, ভেপা, তামারসহ আরও অনেক নামে ডাকা হয়। নিম আমাদের উপকারী বন্ধু। যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়। পরিণত নিম গাছের গুড়ি আসবাবপত্র তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। জানালা-দরজার কাঠামো তৈরিতেও নিম কাঠ ব্যবহার করা হয়।
নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। আকৃতিতে সাধারণত ৪০-৫০ ফুট লম্বা হয়। এর কাণ্ডের ব্যস ২০-৩০ ইঞ্চি। ডালের চারদিকে ১০-১২ ইঞ্চি যৌগিক পাতা জন্মে। এদের পাতা সাধারণত কাস্তের মতো বাঁকানো থাকে। পাতার কিনারায় ১০-১৭টি করে খাঁজযুক্ত অংশ থাকে। পাতা ২.৪-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়।
নিম গাছে এক ধরনের ফল হয়; যেটা আঙুরের মতো দেখতে। এই ফলের একটিমাত্র বীজ থাকে। জুন-জুলাইতে এই ফল পাকে এবং কাঁচা অবস্থায় এর স্বাদ তেঁতো হয়। তবে পেকে হলুদ হওয়ার পর মিষ্টি হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। যে কোনো মাটিতে এটি স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে ওঠে। খোলামেলা জায়গায়, রাস্তার পাশে বেশি দেখা যায়।
উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে এটি ভালো হয়। মাটির পিএইচ ৬.২-৮.৫ এবং বৃষ্টিপাত ১৮-৪৬ ইঞ্চি ও ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপকারী। নিম ফুলের মধু অন্য ফুলের মধুর তুলনায় বেশি পুষ্টিকর ও ওষুধি গুণসম্পন্ন। বসন্ত ও বায়ু শোধনকারী হিসেবে সেরা।
নিম মাটির ক্ষয় ও মরুময়তা রোধ করে। নদীভাঙন ঠেকাতেও এই গাছের ভূমিকা অনেক। প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতেও নিম গাছ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিমের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানো যায়। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকরী। বাদ্যযন্ত্র তৈরিতেও প্রাচীনকালের মানুষ নিম গাছ ব্যবহার করতো।
এ গাছের কাঠ খুবই শক্ত হয়। কখনো ঘুণ ধরে না, পোকা বাসা বাঁধে না। এমনকি উঁইপোকাও খেতে পারে না। দাঁতের মাড়ি শক্ত করার কাজে নিমের ডাল ভীষণ উপকারী। অযত্ন-অবহেলায় বেড়ে ওঠে এই গাছ। দিন দিন যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে উপকারী ওষুধি গুণসম্পন্ন গাছটি। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। বেশি বেশি নিম গাছ রোপণ করতে হবে।