সম্পর্কের বরফ গলছে জামায়াত বিএনপির
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ। লন্ডনে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে, যা এখন রাজনীতির আলোচিত ইস্যু। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে হঠাৎ জামায়াতের অবস্থান বদল ও বিএনপির দাবির কাছাকাছি আনা-এ বৈঠকের ফল কিনা তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ।
তবে লন্ডনের বৈঠকে দুদলের সম্পর্কে যে বরফ গলছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য থেকেই। কিন্তু সেই সম্পর্ক সামনের দিনে কোনো নির্বাচনি ‘সমঝোতা’ বা ফের ‘জোট’ গঠনের দিকে যাবে কিনা-তা নিয়েও নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিষয়টি ধারণা ও গুঞ্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। যুগান্তরকে এমনটিই জানিয়েছে দল দুটির একাধিক সূত্র।
বিএনপিসহ মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনড়। বুধবারও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও একই দাবি জানিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলে আসছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবশ্য এখন দলটি বলছে, তারা আগামী রমজানের আগেই সংসদ নির্বাচন চায়। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দলটির দাবিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, এখন নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান থেকে জামায়াতের দূরত্ব কমতে শুরু করেছে। বলা যায়, এক সময়ের জোটমিত্র জামায়াত শিগগির আরও কাছাকাছি পৌঁছে সরল রেখায় চলে আসতে পারে।
আগামী বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারির (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) পর রমজান শুরু হবে। তার আগেই নির্বাচনের পক্ষে জামায়াত। বৃহস্পতিবার জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার, গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ-এই তিনটি শর্ত পূরণের কথা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারা বলেন, এটি বিএনপিসহ মিত্ররাও চায়। অর্থাৎ তাদের দাবি প্রায় একই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে মিল ছিল না জামায়াতের অবস্থান। তবে নির্বাচন ইস্যুতে দুদলের অবস্থান এখন কাছাকাছি চলে আসার বিষয়টি হওয়া লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠকের ফল হতে পারে। ওই বৈঠক যদি ফলপ্রসূ হয় আগামী দিনে আরও কিছু তৎপরতা দেখা যেতে পারে, যা দুদলকে আরও কাছাকাছি এনে দেবে। এতে করে সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন রাজনৈতিক দলের চাওয়া অনুযায়ী হবে। দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।