নিঃসঙ্গ ভারত, একমাত্র ভরসা রাফায়েল

ছবি: সংগৃহীত

সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চারপাশে ছিল কেবল বন্ধু আর বন্ধু। আজ এ বন্ধুর বাড়ি, তো কাল ঐ বন্ধুর বাড়ি। সবসময় মোদির চারপাশে থাকতো বিদেশি রাষ্ট্রনেতা, কর্পোরেট, রথি-মহারথি আর রাজনৈতিক মিত্রদের ঢল। কিন্তু সময় বদলেছে। আজ সেই মোদি একা নিঃসঙ্গ। দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। কিন্তু কেউ দড়জা খুলছে না। কেউ কথা বলছে না, দাড়াচ্ছে না তাঁর পাশে। যে বন্ধুদের সঙ্গে হাত ধরে ছবি তুলতেন, সে বন্ধুরাই কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউবা নীরবে তাঁর শত্রুদের সঙ্গে চায়ের টেবিলে বসছেন। 


কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলার ঘটনায় উত্তাল গোটা উপমহাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার পারমানবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। চরম উত্তেজন। এই হামলার পর পরই শুরু হয় হুমকি, পাল্টা হুমকি। আর সামরিক প্রস্তুতির আতঙ্কজনক খেলা। সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন নেয়ার চেষ্টা শুরু করে মোদিজি। নরেন্দ্র মোদি কথা বলেন বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতাদের সঙ্গে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে হাজির হন শতাধিক রাষ্ট্রের কূটনৈতিকবৃন্দ। 


কিন্তু এখানে এক অবাক করা ঘটনা। দরজায় দরজায় ঘুরেও একরকম কূটনৈতিক একাকিত্বে পড়ে গেল ভারত। পরাশক্তিদের সমর্থনের আশায় যাত্রা শুরু হলেও হাতে ফিরলো শূন্যতা আর উদ্বেগ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন তার দেশ কাশ্মীর ইস্যুতে নিরপেক্ষ অবস্থান নেবে। 


ভারতের বহুদিনের পুরনো বন্ধু রাশিয়া। তাদের দিক থেকেও নেই আশার আলো। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার ঝুঁকি নিতে চায় না মস্কো। তাই নয়াদিল্লির আহ্বানে খুব একটা সাড়া মিলছে না। শুধু তারাই নয়, চীন ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। পেহেলগামের ঘটনার পর বেইজিং থেকে পাকিস্তানকে সমর্থনের বার্তা হয়েছে। শুধু কথাই নয় বরং সামরিক সহায়তাও মিলেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চীন পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক পিএল ১৫ দূরপাল্লার আকাশ থেকে হামলার মিসাইল সরবরাহ করেছে। যা ভারতের রাফায়েল যুদ্ধ বিমানকে গুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। 


তুরস্ক পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন পাকিস্তানের জনগনের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। এমনটি অস্ত্রবাহী সাতটি সামরিক বিমান ইতিমধ্যে তুরস্ক থেকে পাকিস্তানে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। 


এদিকে এতদিন আফগানিস্তানকে জঙ্গি রাষ্ট্র আখ্যা দিলে এখন মোদি সরকার তালেবানের সঙ্গেও বৈঠকে বসেছে শুধুমাত্র সমর্থন পাওয়ার আশায়। অন্য দেশ তো পরের কথা, দেশের অভ্যন্তরেও নানা প্রতিকূলতা বেড়েই চলেছে মোদির। 


পাঞ্জাবের খালিস্তান আন্দোলনের নেতা গুরুপতবন্ত সিং পানুন ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যেকোন আগ্রাসনের ক্ষেত্রে শিখরা তাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেবে না। এমনকি পাকিস্তানের পক্ষেও দাঁড়ানোর কথাও বলেছেন তিনি। 


মিত্রহীন বিচ্ছিন্ন আর অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত ভারত এখন আশা রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে। সম্প্রতি ভারত নিঃসঙ্গতার প্রমাণ হিসেবে ফ্রান্সের সঙ্গে করেছে ২৬টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি। বড় শক্তি নিরপেক্ষতা, মিত্রদের অনুপস্থিতি আর ঘরের ভিতরে অস্থিরতা, সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যত একা হয়ে পড়েছে ভারত।