সিন্ধু নদ ইস্যুতে ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। এরই মধ্যে সিন্ধু নদ ইস্যুতে ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেন, ভারত যদি সিন্ধু নদে পানি বণ্টন চুক্তি লঙ্ঘন করে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা করে, তাহলে পাকিস্তান সামরিকভাবে তা ধ্বংস করে দেবে।

শনিবার খাজা আসিফ বলেন, “ভারত যদি অবকাঠামো নির্মাণে এগোয়, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবে হামলা চালাব।” তিনি বলেন, আগ্রাসন কেবল গোলাগুলি বা কামান হামলা নয়, পানি সরিয়ে নেওয়াও এক ধরনের আগ্রাসন। এর ফলে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় লাখো মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। যদিও পাকিস্তান এখনই বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোচনার পক্ষে রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কড়া সমালোচনা করেন খাজা আসিফ। তিনি অভিযোগ করেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যেই মোদি এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি, যদিও এখনো হুমকি পুরোপুরি কেটে যায়নি।

উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পাকিস্তানে উৎপাদিত বা সেখান থেকে রপ্তানি হওয়া সব ধরনের পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননীতির স্বার্থে। নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। একই সঙ্গে পাকিস্তান থেকে পাঠানো কোনো চিঠি বা পার্সেলও ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইসলামাবাদ শনিবার সফলভাবে আবদালি নামের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্র ৪৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানায়, এই উৎক্ষেপণের মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক প্রস্তুতি যাচাই এবং উন্নত প্রযুক্তি পরীক্ষা।

‘এক্স সিন্ধু’ নামে একটি সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে এই উৎক্ষেপণ চালানো হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডার, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ডিভিশন এবং বিভিন্ন কৌশলগত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। আইএসপিআর উৎক্ষেপণের একটি ভিডিওও প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সফল উৎক্ষেপণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় পাকিস্তানের কৌশলগত বাহিনীর প্রস্তুতি ও দক্ষতায় তারা পূর্ণ আস্থা রাখছেন।

উল্লেখ্য, এই সময়টাতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায়। ২২ এপ্রিল সেখানে সংঘটিত ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। ভারত এই হামলার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা সন্ত্রাসীদের দায়ী করছে, তবে পাকিস্তান অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।