সীমান্তে উত্তেজনা: সেইন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের অনিশ্চিত জীবন

সংগৃহীত

ভারতের সীমান্তবর্তী কৃষিপ্রধান গ্রাম সেইন্ত, যা কাঁটাতারে ঘেরা পাকিস্তান সীমান্তের কাছেই অবস্থিত, সেখানে বসবাসরত মানুষজন ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে তাদের পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। এই অঞ্চলের মানুষদের মনে এখনো দুই দেশের সাম্প্রতিক বড় ধরনের সেনা সংঘর্ষের স্মৃতি তাজা, এবং সেই আতঙ্ক থেকেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

চেনাব নদীর তীরে অবস্থিত প্রায় ১,৫০০ জনের এই গ্রামের যেসব মানুষ এখনও রয়ে গেছেন, তারা দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মাঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামের নির্বাচিত প্রধান, ৬০ বছর বয়সী সুখদেব কুমার জানান, এখানকার মানুষজন দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা করতে পারেন না, কারণ যেকোনো সময় ভুলভাবে ছোড়া একটি গোলা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। ফলে বাড়ির বাইরে কোনো বিনিয়োগ করতেও তারা আগ্রহী নন।

সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হওয়া ভয়াবহ হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। এই হামলায় জড়িত সন্দেহে তিনজন—দুই পাকিস্তানি ও একজন ভারতীয়—যারা লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য বলে দাবি করা হয়েছে, তাদের পোস্টার প্রকাশ করেছে ভারতীয় পুলিশ। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, যার মধ্যে রয়েছে একে অপরের নাগরিককে বহিষ্কার ও পাল্টাপাল্টি বিবৃতি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতে, কাশ্মীর সীমান্ত বরাবর ২৪ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন রাতভর গুলিবিনিময় চলছে। মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীর অঞ্চল ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ। উভয় দেশই এই অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করে।

সেইন্ত গ্রামটি হিন্দু-অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ, যেখানে সবুজ মাঠ ও উর্বর জমির ফাঁকে ফাঁকে সেনা শিবির ও ওয়াচটাওয়ার দেখা যায়। কুমার জানান, গ্রামের অধিকাংশ পরিবার অন্যত্র বাড়ি নির্মাণ করে ফেলেছে; এখন মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পরিবার এখানে আছে।

১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধেও এই অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক বিক্রম সিং, যিনি তখন কিশোর ছিলেন, স্মরণ করে বলেন, তখন মর্টারের গোলা মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যেত এবং অনেকগুলো খুব কাছেই বিস্ফোরিত হতো। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিও তেমনই উত্তেজনাপূর্ণ, বিশেষ করে পহেলগামের হামলার পর শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই আতঙ্কে রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল ভারত-পাকিস্তানকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাই সংযম ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সূত্র- বাসস