বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে পাকিস্তানের পতন, ভারত-বাংলাদেশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ
বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ২০২৫ সালে পাকিস্তান ছয় ধাপ পিছিয়ে ১৫৮তম অবস্থানে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (RSF) সম্প্রতি এই সূচক প্রকাশ করেছে।
এই সূচকটি পাঁচটি মানদণ্ড—রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা ও আইনগত—ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এবারও সূচকের শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এর পরেই রয়েছে এস্তোনিয়া এবং নেদারল্যান্ডস। অপরদিকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে চীন, উত্তর কোরিয়া এবং আফ্রিকার ইরিত্রিয়া।
ডন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে পাকিস্তানের এই পতন দেশটিতে বাড়তে থাকা কর্তৃত্ববাদ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকটের ইঙ্গিত দেয়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস সতর্ক করে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চরম হুমকির মুখে রয়েছে, এবং পাকিস্তানের পরিস্থিতিও ক্রমাগত দমনমূলক হয়ে উঠছে।
পাকিস্তানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাসের জন্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আর্থিক সংকট এবং সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়েছে। সম্প্রতি পাস হওয়া ইলেকট্রনিক অপরাধ প্রতিরোধ আইনের (পিইসিএ) সংশোধনীগুলো পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ভিন্নমত দমন এবং স্বাধীন সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
পাকিস্তান ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (PFUJ) এই সংশোধনীকে ‘কালো আইন’ আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা মনে করে, এটি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের একটি অপচেষ্টা।
গত বছরও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারকে সাংবাদিকতার অবনতিশীল পরিবেশ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।
অন্যদিকে, প্রতিবেদনটিতে ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতে ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র’ হিসেবে পরিচিত হলেও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সেখানে সংকটাপন্ন। ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, গণমাধ্যম মালিকানার কেন্দ্রীকরণ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেছে। প্রতিবছর ভারতে দুই থেকে তিনজন সাংবাদিক তাদের পেশাগত কারণে প্রাণ হারান, ফলে দেশটি সাংবাদিকদের জন্য অন্যতম বিপজ্জনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আরএসএফ-এর মতে, ভারতের গণমাধ্যমে সমাজের বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয় না। উচ্চবর্ণের হিন্দু পুরুষরা এখনও অধিকাংশ নেতৃত্বের পদে রয়েছে এবং সন্ধ্যার প্রধান টক শোগুলিতে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ১৫ শতাংশের নিচে। হিন্দি ভাষার বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল ধর্মীয় কনটেন্টে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে এবং কখনো কখনো মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেয়।
তবে এর বিপরীতে কিছু ব্যতিক্রমী সংবাদমাধ্যমের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন ‘খবর লহরিয়া’, যা গ্রামীণ অঞ্চলের নারী সাংবাদিক এবং সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে গণমাধ্যম স্বাধীনতা সংকটের মুখে ছিল। তবে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নতুন পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস।