গাজার মানবিক সংকট: ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ভয়াবহতা

সংগৃহীত

গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে ‘নো-গো’ জোনে পরিণত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েল তার সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (OCHA) জানিয়েছে, ইসরায়েল বিভিন্ন অঞ্চলে জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির নির্দেশ জারি করে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় মার্চ মাসে, যখন যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল গাজায় আবার সামরিক অভিযান শুরু করে।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা ‘নো-গো’ জোন ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে স্থানীয়দের অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। একই ধরনের অবস্থা উত্তর গাজার গাজা শহরেও, যেখানে শুধুমাত্র শহরের উত্তর-পশ্চিম অংশ কিছুটা মুক্ত রাখা হয়েছে। শুজাইয়া ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকেও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতি ইসরায়েলের বৃহত্তর কৌশলের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে শুধু হামাসকে দুর্বল করার লক্ষ্যই নয়, বরং গাজার জনবিন্যাস ও রাজনৈতিক কাঠামো পাল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টাও স্পষ্ট। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সামরিক বাহিনী একাধিকবার বলেছেন, তাদের উদ্দেশ্য হামাসের সামরিক শক্তি ধ্বংসের পাশাপাশি গাজা থেকে জনসংখ্যা হ্রাস করা এবং বাসিন্দাদের জীবিকা সংকটে ফেলা।

ইসরায়েল যখন আগ্রাসী হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তখন গাজার সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন যাপন করছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, তারা হয়তো আর কখনো তাদের ঘরে ফিরতে পারবেন না, যা এই মানবিক সংকটকে আরও গভীরতর করছে।

এই আক্রমণের ফলে গাজায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মতে, গাজার বাজারে খাদ্য সামগ্রীর ঘাটতি রয়েছে এবং কোনো সহায়তাও পৌঁছাচ্ছে না। তারা জানিয়েছে, ১০ লাখেরও বেশি গৃহহীন মানুষের খাদ্য সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বটসেলেম অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যার ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

এই সব সত্ত্বেও, গাজার মানুষের মধ্যে একটি প্রতিরোধের মনোভাব গড়ে উঠছে। অনেক ফিলিস্তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, তারা গাজা ছাড়বেন না এবং তাদের ভূমির জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন। এই সংকটময় সময়ে তাদের প্রতিবাদ ও দৃঢ় সংকল্প আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ হিসেবেই দেখা যাচ্ছে।

এ পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক হামলায় গাজায় ৫২,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এ অবস্থায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এই মানবিক সংকট মোকাবেলায় জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র : আল- জাজিরা