কাশ্মির: স্বর্গভূমি থেকে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু

'পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ'—এই উপাধি নিয়ে পরিচিত কাশ্মির আজ বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত অঞ্চল। ইতিহাস, ভূরাজনীতি ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের ত্রিমাত্রিক বিরোধে কাশ্মির পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে।

🇮🇳 🇵🇰 🇨🇳 কাশ্মির বিরোধের সূচনা

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলেও কাশ্মির প্রশ্নটি থেকেই যায় অনিষ্পন্ন। তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং স্বাধীন থাকতে চাইলেও তাঁর অবস্থান ছিল দুর্বল। একই সময়ে পাকিস্তানি বিদ্রোহীরা কাশ্মিরে হামলা চালালে হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সহায়তা চান। ভারতের সেনাবাহিনী কাশ্মিরের অধিকাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং শর্তসাপেক্ষে অঞ্চলটি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

ফলে, জম্মু, কাশ্মির উপত্যকা ও লাদাখ যায় ভারতের নিয়ন্ত্রণে; আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট-বালতিস্তান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তান। এর বাইরে, ১৯৬২ সালে চীন পূর্ব কাশ্মিরের আকসাই চিন অঞ্চল দখল করে নেয়।

বর্তমানে ভারত নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় ১,০১,৪৩৮ বর্গকিমি, পাকিস্তান ৮৫,৮৪৬ বর্গকিমি এবং চীন ৩৭,৫৫৫ বর্গকিমি কাশ্মির এলাকা।

🔥 উত্তেজনার দীর্ঘ ইতিহাস

কাশ্মির ইস্যুকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তান তিনটি বড় যুদ্ধ (১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯) ও অসংখ্য সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিতে নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC) মেনে চলার কথা বললেও উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কখনোই পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। চীন-ভারত সম্পর্কেও কাশ্মির সীমান্তে একাধিকবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

🛑 বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সহিংসতা

১৯৮০-এর দশক থেকে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে ভারতীয় দমননীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। গড়ে ওঠে সশস্ত্র গোষ্ঠী। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাশ্মিরে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক সেনা। এরপরের কয়েক দশকে চলমান সহিংসতায় নিহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

২০১৬ সালে উরিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ১৯ ভারতীয় সেনা। তার পাল্টা জবাবে চালানো হয় 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলায় ৪০ সেনা নিহত হলে ভারতের বালাকোটে বিমান হামলা পুরো বিশ্বে আলোড়ন তোলে।

⚖️ ৩৭০ ধারা বাতিল ও পরবর্তী পরিস্থিতি

২০১৯ সালের আগস্টে কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (ধারা ৩৭০) বাতিল করে মোদি সরকার। রাজ্যটিকে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়—জম্মু ও কাশ্মির এবং লাদাখ। মোদি প্রশাসন দাবি করে, এর মাধ্যমে কাশ্মিরে স্থিতিশীলতা ফিরেছে এবং পর্যটন বেড়েছে। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দমন-পীড়ন ও নিরাপত্তাহীনতা এখনও বহাল।

এর সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত—কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, যা আবারও প্রশ্ন তোলে উপত্যকার স্থিতিশীলতা নিয়ে।