ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: দক্ষিণ এশিয়ার অশান্তির শঙ্কা

সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান বৈরিতা আঞ্চলিক রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হলে, অঞ্চলজুড়ে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সার্কের কার্যকারিতা আরও ব্যাহত হতে পারে। আটলান্টিক কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে, ভারতপন্থী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তী সময়ে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দিল্লির সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ হয়েছে, যা ঢাকাকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে।

এছাড়াও, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ—এই সংঘাতের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়তে পারে। কাশ্মীরের উত্তেজনা শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

নেপাল ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করবে ভারত ও চীনের মধ্যে, কিন্তু এর নিরপেক্ষ অবস্থান ভারতকে আরও সন্দেহপ্রবণ করে তুলতে পারে। দুই দেশের মধ্যে সার্বভৌমত্ব ইস্যুতে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা কূটনৈতিক সম্পর্কেও চাপ সৃষ্টি করেছে।

ভুটানের ক্ষেত্রে, ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, ভারতের সামরিক পদক্ষেপগুলো চীনের সীমান্ত তৎপরতাকে উস্কে দিতে পারে। অন্যদিকে, কাশ্মীরের সংঘাত মালদ্বীপের ইসলামপন্থি জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত বৃদ্ধি পেলে, তা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভারতের অবস্থানকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে চায়, যা কোয়াড জোটেও প্রতিফলিত হয়। সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতের কৌশলগত মনোযোগ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও বাড়বে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের উচিত উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। অন্যদিকে, ভারতের উচিত আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা, যাতে কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যকর পথ উন্মুক্ত থাকে। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে এবং সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহালসহ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে সাধারণ মানুষের জীবন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কাশ্মীরের সাধারণ জনগণ বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের সংঘাতের চাপে বিপর্যস্ত। একদিকে দিল্লির কঠোর নীতি, অন্যদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতায় তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তান বরাবরই পরস্পরকে দোষারোপ করে এসেছে। ভারত অভিযোগ করে যে, পাকিস্তান বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করে। এই পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ফলে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ সবসময় অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছে।

সম্প্রতি, ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। নিহতদের বেশিরভাগই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পর্যটক। এ ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে গভীর রাতে বিমান হামলা চালায়, যার ফলে পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে।

এভাবে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুধু দুই দেশের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্যই বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।