🛑 গাজায় কার্যত অচল জরুরি সেবা, খাদ্য ও জ্বালানির চরম সংকটে ধুঁকছে উপত্যকা


দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ, চরম খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গাজা উপত্যকার জরুরি ও চিকিৎসাসেবাসমূহ। বৃহস্পতিবার (৮ মে) স্থানীয় সেবাদানকারীরা জানান, ইসরায়েলি অবরোধের দুই মাস পার হওয়ার প্রেক্ষাপটে তারা এখন আর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন না।

গাজার বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানান, ডিজেল না থাকায় তাদের ৭৫ শতাংশ জরুরি যানবাহন কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ ও জেনারেটর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

 

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, রান্নাঘর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সহায়তাপ্রাপ্ত হাজারো শিশু এখন ‘অনাহার, অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে’ রয়েছে। জাতিসংঘের অধীনস্থ ২০ জনেরও বেশি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ গাজায় গণবিনাশ ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

 

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস-এর একটি ফিল্ড হাসপাতালে রক্তদানের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বহু ফিলিস্তিনি। ল্যাবপ্রধান হিন্দ জোবা বলেন, “খাবার নেই, পানি নেই, তবু মানুষ রক্ত দিয়ে যাচ্ছে—এই রক্তই বাঁচায় আহতদের জীবন।”

 

গত মার্চে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় ইসরায়েল আবার গাজায় অভিযান শুরু করে। সোমবার ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা গাজায় “জনগণ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা” সহ নতুন সামরিক রূপরেখা অনুমোদন করেছে। আন্তর্জাতিক মহলে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

 

হামাসের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গাজায় ৫২ হাজার ৬৫৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২১৮ জন নিহত হন, অপহৃত হন ২৫১ জন।

 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচডকটরস উইদআউট বর্ডারস জানিয়েছে, সীমান্ত বন্ধ রেখে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর প্রবেশ ঠেকিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে।

 

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানায়, গাজায় এখন পর্যন্ত ১০১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন—একটি একক সংঘাতে যা সর্বোচ্চ। মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।

 

জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, “এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই গাজা মানব বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।” উপত্যকার প্রায় সব অবকাঠামো—স্কুল, হাসপাতাল, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা—ধ্বংস হয়ে গেছে।