"মানবিক সহায়তার ভিন্ন চিত্র, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো যেন জর্ডানের লাভজনক ব্যবসা"
গাজা ত্রাণে মধ্যস্থতার সুযোগে বিপুল আয় করছে জর্ডান: মিডল ইস্ট আই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় চলমান মানবিক সংকটের মধ্যে আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রবেশের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে জর্ডান সরকার—এমন দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই (MEE)। সংস্থাটির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জর্ডানের সরকারি দাতব্য সংস্থা জর্ডান হাশেমাইট চ্যারিটি অর্গানাইজেশন (JHCO) বিদেশি ত্রাণবাহী ট্রাক ও বিমানের জন্য উচ্চ হারে ফি আদায় করছে, যার বড় অংশ সরাসরি জমা যাচ্ছে জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে।
প্রতি ট্রাকে ফি ২২০০ ডলার, বিমান প্রতি ২–৪ লাখ!
মিডল ইস্ট আই দাবি করেছে, গাজায় প্রবেশ করা প্রতিটি ত্রাণবাহী ট্রাকের জন্য জর্ডান কর্তৃপক্ষ প্রায় ২,২০০ মার্কিন ডলার ফি নিচ্ছে। এই অর্থ JHCO এর মাধ্যমে জর্ডান আর্মির কাছে জমা দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, একটি ত্রাণবাহী বিমানের জন্য আদায় করা হচ্ছে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ ডলার, যদিও একটি বিমানের ত্রাণ সাধারণত একটি ট্রাকের অর্ধেকেরও কম হয়।
"আসলে ত্রাণ পাঠাচ্ছে বিদেশিরাই"
JHCO-এর মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করছে, তার বেশিরভাগই আসছে বিদেশি সরকার ও আন্তর্জাতিক এনজিও থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জর্ডানের সরাসরি অবদান "সামান্য", কিন্তু তাদের ব্যানারে ত্রাণ পাঠানোর অনুমোদন নিতে গিয়েই এই অর্থ আদায় হচ্ছে।
ত্রাণ থেকে আয়, এবার অবকাঠামো সম্প্রসারণ
আয় বাড়ার ফলে জর্ডান এখন তাদের লজিস্টিক অবকাঠামো সম্প্রসারণে ব্যস্ত। ইতোমধ্যে একটি বিদেশি অনুদান থেকে ২০০টি নতুন ত্রাণবাহী ট্রাক কেনা হয়েছে, এবং জাতিসংঘের সহায়তায় বড় গুদাম নির্মাণ চলছে।
সরকারের কোনো মন্তব্য নেই
এই অভিযোগ নিয়ে জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী ও JHCO—তিনটি পক্ষের কারো পক্ষ থেকেই কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানায় মিডল ইস্ট আই।
এয়ারড্রপ বনাম স্থলপথ: কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক
গাজা থেকে পাওয়া মানবিক কর্মীদের প্রতিক্রিয়ায় জানা যায়, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয়। কারণ, স্থলপথে ত্রাণ পাঠানো অধিক কার্যকর ও নিরাপদ।
তবে জর্ডান দাবি করেছে, তারা প্রায় ৪০০টি এয়ারড্রপ করেছে, যার অনেকগুলো ছিল আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে পরিচালিত। পাশাপাশি ১৪০টির বেশি স্থলপথে ত্রাণবহর পাঠানো হয়েছে, প্রতিটি বহরে ছিল একাধিক ট্রাক। এসব পাঠাতেও ইসরায়েলের অনুমতি প্রয়োজন হয়।
গাজায় মানবিক সংকট বাড়ছে
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কখনোই সেই চাহিদা পূরণ হয়নি।
জর্ডান সরকারকে ঘরোয়া চাপ
১৯৪৮ সালের নাকবা-র সময় বাস্তুচ্যুত বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী জর্ডানে বসবাস করেন। গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের শুরুতেই দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ হয়, যা সরকারকে কূটনৈতিকভাবে বিব্রত করে। এরই প্রেক্ষাপটে জর্ডান সামরিকভাবে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেয়—যদিও বিতর্ক রয়েছে তা কতটা মানবিক, আর কতটা লাভজনক।