ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে কার ক্ষতি কত?

ছবি; সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত আবারো উপমহাদেশে যুদ্ধের ছায়া ফেলেছে। কয়েক দিনের এই যুদ্ধাবস্থায় দুই দেশই বিপুল পরিমাণ সামরিক, কৌশলগত এবং মানবিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। যদিও মার্কিন মধ্যস্থতায় ১০ মে থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তবে এই সংঘাতের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, উভয় পক্ষেই ক্ষতি ভয়াবহ।

এই প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনাবলির ভিত্তিতে দুই দেশের সামরিক ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো—

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও সময়রেখা

গত মাসে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ি করে, অন্যদিকে পাকিস্তান হামলার সঙ্গে যে কোনো ধরণের যোগসূত্রীতা অস্বীকার করে।

পেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘোষণা করে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ০৭ মে রাতে ভারত পাকিস্তানের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান ১০ মে ভোররাতে ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় সমন্বিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়। এছাড়া আগের দুই দিন রাতে পাকিস্তান থেকে অন্তত ৪০০ সামরিক ড্রোন ভারতে প্রবেশ করেছে বলে দাবি করে ভারতের সামরিক বাহিনী। এসব ড্রোনের অনেকগুলো ভারতের মাটিতে আঘাত হানার তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যমগুলো।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

১০ মে বিকেল ৫টা থেকে উভয় পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়। তবে সংঘাতের এই কয়েক দিনে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা দুই দেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা।

 

পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণ

বেসামরিক প্রাণহানি : দু-পক্ষের দাবি ও সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে আনুমানিক ৬৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইসলামাবাদ, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, কোয়েটা ও গুজরানওয়ালার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আবাসিক ভবন, স্কুল ও হাসপাতাল।

সামরিক ক্ষয়ক্ষতি : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমপক্ষে ১৮ জন সদস্য নিহত, এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম গুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে ধারণা করা যায়।

এছাড়া একটি ড্রোন কন্ট্রোল সেন্টার এবং দুইটি কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল হাব ধ্বংস হয়েছে বলে একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। একাধিক সামরিক সরঞ্জাম সংরক্ষণের গুদাম ও রাডার স্টেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কাঠামোগত ও কৌশলগত ক্ষতি : ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লাহোর ও মুলতানে কিছু সামরিক ঘাঁটির বিমান অবতরণ ব্যবস্থা অচল হয়েছে বলে জানা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুইটি জ্বালানি ডিপো, যার ফলে সাময়িক জ্বালানি সংকট দেখা দেয়।

 

ভারতের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণ

সামরিক ক্ষয়ক্ষতি : পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতের সেনাবাহিনী ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের প্রায় ৫০-৭০ জনের বেশি সেনা নিহত এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছে।

ভারেতের বিভিন্ন শহরে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে— শ্রীনগর এয়ারবেস— যেখানে হামলায় ২০ জন ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হয় বলে জানা যায়। শ্রীনগর বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতি, উধমপুর ও পাঠানকোট বিমানঘাঁটি এবং চণ্ডীগড়ের অস্ত্রাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়।

এছাড়া, আদমপুর এয়ারবেসে একটি অত্যাধুনিক S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।

বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি : আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না হলেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর দিচ্ছে। এছাড়া জম্মু, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে সীমান্তবর্তী এলাকায় গৃহহীন হয়েছে শত শত পরিবার।

কৌশলগত ক্ষতি : পাকিস্তানের হামলায় ভারতের একাধিক বিমানঘাঁটিতে জ্বালানি মজুত ধ্বংস হওয়ায় তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়ে বলে জানায় পাকিস্তান। এছাড়া ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টেলিজেন্স কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে বলে পাকিস্তান দাবি করেছে, যদিও ভারত সরকার তা অস্বীকার করেছে।

 

কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

এই সংঘাত দুই দেশের কূটনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তন এনেছে। ভারত আন্তর্জাতিকভাবে ‘সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে তার পদক্ষেপকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পর নিজেকে ‘প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান’ নেওয়া রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছে।

মানসিক দিক থেকেও এই সংঘর্ষ দুই দেশের নাগরিকদের মাঝে আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতা এবং যুদ্ধবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি করেছে। যুদ্ধবিরতির পর সামাজিক মাধ্যমে শান্তির পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছে।

সামনে কী?

যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, কিন্তু এটি কতটা টেকসই হবে, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক আলোচনার উপর। ১২ মে আবার দুই দেশের ডিজিএমওদের মধ্যে যোগাযোগ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে যুদ্ধবিরতির বাস্তব প্রয়োগ এবং শান্তি আলোচনার রূপরেখা চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘর্ষের মাধ্যমে দুই দেশের নেতৃত্ব বুঝে গিয়েছে যে, পুরোপুরি সামরিক পথ কখনোই স্থায়ী সমাধান দিতে পারে না। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়েই কেবল উপমহাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরতে পারে।