পরিস্থিতি বদলেছে, তাই ১৯৭১ এর সঙ্গে ২০২৫ এর তুলনা টানা যায় না: শশী থারুর
শশী থারুর: “মোদি ও ইন্দিরা গান্ধীকে এক কাতারে তুলনা অযৌক্তিক”
ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনা এবং যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তুলনার সমালোচনা করেছেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা ও লোকসভার সদস্য শশী থারুর।
তিনি বলেছেন, “১৯৭১ সাল ছিল এক বিশাল অর্জন। ইন্দিরা গান্ধী উপমহাদেশের মানচিত্রই পাল্টে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এবং এএনআই-এর বরাতে জানা যায়, থারুর সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “১৯৭১ সালে ভারত একটি নৈতিক কারণে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল। সেসময় লক্ষ্য ছিল—একটি জাতির স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। সেখানে গণহত্যা চলছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছিল। ভারতের হস্তক্ষেপ সেই পরিপ্রেক্ষিতে ছিল আন্তর্জাতিক ও মানবিক দায়িত্ববোধের অংশ।”
তার মতে, “শুধু পাকিস্তানের দিকে গোলাবর্ষণ করা কোনো ‘স্পষ্ট লক্ষ্য’ হতে পারে না। এটি কৌশলগত প্রতিক্রিয়া হতে পারে, কিন্তু তা ১৯৭১ সালের জাতিগঠনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তুলনীয় নয়।”
শনিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “পাকিস্তান শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী, তবে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে কখনো আপোস করেনি।”
এর কিছুক্ষণ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বার্তায় জানান, দুই দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি কার্যকর অস্ত্রবিরতির চুক্তি হয়েছে, যা এই অঞ্চলের উত্তেজনা হ্রাসে সহায়ক হবে।
বিজেপি’র একাধিক নেতা সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মোদির দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করে তা ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭১ সালের ‘অর্জনের’ সঙ্গে তুলনা করেন। এই তুলনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে শশী থারুর বলেন, “ইতিহাসকে রাজনৈতিক সুবিধার্থে ব্যবহার করলেই তা সত্য হয়ে যায় না। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং ফলাফল—এই তিনটি বিষয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দুই সময়ের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে বিস্তর ফারাক।”
শশী থারুরের বক্তব্য একদিকে যেমন ঐতিহাসিক সত্য ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, অন্যদিকে তা রাজনৈতিক সচেতনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই স্পর্শকাতর ও জটিল। এমন সময়ে নেতৃবৃন্দের তুলনা, ইতিহাসের দায় এবং আন্তর্জাতিক ভূমিকা—সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই ইতিহাসকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করাই সময়ের দাবি