আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল, ইউরোপেও নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা

ইউরোভিশনে ইসরাইল নিষিদ্ধের দাবি: সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নৈতিক অবস্থান

গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি অঙ্গনে নতুন মাত্রার নৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইউরোপের জনপ্রিয় সংগীত প্রতিযোগিতা ইউরোভিশন-এ ইসরাইলের অংশগ্রহণ নিয়ে তীব্র বিতর্ক উঠেছে। এবার ৭২ জন সাবেক ইউরোভিশন প্রতিযোগী এক খোলা চিঠিতে ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নকে (ইবিইউ) আহ্বান জানিয়েছেন, যেন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরাইলকে প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এই সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ কেবল একটি প্রতিযোগিতাকে ঘিরে নয়—এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল, আর্ট এক্সিবিশন ও একাডেমিক প্ল্যাটফর্মেও। ইউরোপজুড়ে উঠছে একটি প্রশ্ন: মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো দেশ কি আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির অংশ হতে পারে?

আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আরটিই এই বিতর্কে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। সম্প্রতি তারা ইউরোভিশনে ইসরাইলের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনার জন্য ইবিইউকে আহ্বান জানিয়েছে। আরটিই-এর মহাপরিচালক কেভিন বাকহার্স্ট গাজা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আরটিই নিরপেক্ষতা বজায় রাখলেও ইসরাইলি সরকার দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা কেএএন-এর ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে।

চিঠিতে সাবেক প্রতিযোগীরা অভিযোগ করেন, ইসরাইলকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া গাজার যুদ্ধাপরাধকে স্বাভাবিকীকরণ ও বৈধতা দেওয়ার শামিল। তারা উল্লেখ করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ২০২২ সালে যেমন রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তেমনি ইসরাইলের ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য হওয়া উচিত।

ইবিইউ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, তারা উদ্বেগের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন। তবে সংগঠনটি ইউরোভিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি ইতিবাচক ও ঐক্যবদ্ধকারী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে বজায় রাখতে চায়।

তবে সমালোচকরা বলছেন, 'রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে পৃথক রাখার' নীতির আড়ালে ইবিইউ একটি পক্ষপাতদুষ্ট নিরপেক্ষতা গ্রহণ করছে। তাদের মতে, নিপীড়ন, যুদ্ধ বা গণহত্যার সময় নীরবতা মানে পরোক্ষভাবে সমর্থন।

এই বিতর্কে ইউরোভিশন কেবল একটি উদাহরণ। বড় প্রশ্ন হয়ে উঠছে: মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো রাষ্ট্র কি আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতীক হতে পারে? এই উত্তরের সন্ধানেই আজ নৈতিকভাবে জাগ্রত ইউরোপ।