১৯৭১ ও ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপট এক নয়: কংগ্রেস নেতা
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের জয় একটি "মহান অর্জন" যা একজন ভারতীয় হিসেবে আমাকে গর্বিত করে। ইন্দিরা গান্ধী উপমহাদেশের মানচিত্র পুনর্লিখন করেছিলেন। ১৯৭১-এর সেই পরিস্থিতি এবং ২০২৫ সালের পরিস্থিতি এক নয়।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কারণ থাকলে, সেটি চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এটা সেই ধরনের যুদ্ধ নয়, যেটা আমরা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমরা কেবল সন্ত্রাসীদের একটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। সেই শিক্ষা দেয়া হয়ে গেছে।’
পেহেলগামে ২৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা ভারত সরকার অব্যাহত রাখবে বলে তিনি মনে করেন। কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, যত সময় লাগুক সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতেই হবে। নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের হত্যা করে কোনও সন্ত্রাসী যেন পার না পায়। তবে এটা করতে গিয়ে আমরা পুরো দেশকে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারি না।’
পাকিস্তানের সঙ্গে এই সংঘাতে মানুষের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না বলেও জানান তিনি। শশী থারুর বলেন, ভারতীয় জনগণের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির দিকে আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিত। ১৯৭১ সালের বিজয় ছিল বিশাল কৃতিত্ব। ওই সময় উপমহাদেশের মানচিত্র পুনরায় এঁকেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। কারণ সেই সময়ের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। আজকের পাকিস্তান ভিন্ন। তাদের সামরিক শক্তি, অস্ত্রশস্ত্র, ধ্বংস করার ক্ষমতা—সবকিছুই আলাদা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানুষকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার লক্ষ্যে ভারত একটি নৈতিক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। থারুর বলেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল ভিন্ন গল্প। আর বর্তমানের এই সংঘাত দীর্ঘ ও প্রাণঘাতী যুদ্ধে রূপ নিতে পারতো। উভয় পক্ষেরই প্রচুর প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। এটা কি আজকের ভারতের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার? না, এটা নয়। যারা এই সন্ত্রাসীদের পাঠিয়েছে আমরা কেবল তাদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম।’
শশী থারুর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভারত কখনই ৭ মের ঘটনার পর এটাকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের শুরু হিসেবে দেখেনি। যদি পাকিস্তান উত্তেজনা না বাড়াতো, তাহলে আমরাও বাড়াতাম না। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার একটি পরিষ্কার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের দিকে কেবল গোলাবর্ষণ করে যাওয়াটা কোনও পরিষ্কার লক্ষ্য নয়।’
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জনের প্রাণহানির পর পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে ভারত। এই ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ভারত পাকিস্তানে হামলা চালালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শনিবার পারমাণবিক অস্ত্রধর ভারত-পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পরপরই কংগ্রেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছবি শেয়ার করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সহায়তার বিষয় তুলে ধরা হয় এতে। এরপরই বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করতেই এমন পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে সমালোচনা শুরু হয় ভারতজুড়ে।