জীবনধারার সঙ্গে শরীরের ঘ্রাণের সম্পর্ক আছে
ছোট্টবেলা থেকেই মায়ের শরীরের ঘ্রাণের সঙ্গে পরিচয়। পৃথিবীজুড়ে এরপর যত মানুষের সঙ্গেই আলাপ-পরিচয় বা অন্তরঙ্গতা হোক না কেন, মায়ের সেই ঘ্রাণটা আর কারও কাছেই পাওয়া যায় না। আদতে প্রতিটি মানুষের শরীরের ঘ্রাণই আলাদা। অবশ্য আপনি যদি সুগন্ধি ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার শরীরে নিশ্চয় সেই ঘ্রাণই পাওয়া যাবে। তবে স্বাভাবিকভাবেই সবার শরীরের নিজস্ব একটা গন্ধ থাকে। আর কার গায়ের গন্ধ কেমন হবে, একাধিক বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করে।
প্রত্যেকের শরীরের গন্ধ আলাদা হওয়ার অন্যতম কারণ জিনগত পার্থক্য। হরমোনের প্রভাবেও দেহের গন্ধে ভিন্নতা আসে। এ বিষয়গুলো আমাদের হাতে নেই। তবে জীবনধারার সঙ্গেও শরীরের ঘ্রাণের সম্পর্ক আছে। এ সম্পর্কে বলছিলেন রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সিনথিয়া আলম।
জিনগত দিক
প্রত্যেক মানুষের জিনের বিন্যাস আলাদা। এই বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে শরীরের গন্ধ আলাদা হয়। তবে মায়ের শরীরের ঘ্রাণের সঙ্গে সন্তানের শরীরের ঘ্রাণের মিল পাওয়া যায়। বাবার শরীরের ঘ্রাণ আবার সন্তানের শরীরের ঘ্রাণে এভাবে প্রভাব ফেলে না।
হরমোনের ব্যাপার-স্যাপার
পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণে গন্ধের ধরনটাই আলাদা হয়। এই হরমোনের প্রভাবে নারীর তুলনায় পুরুষের শরীরের গন্ধ বেশ তীব্র হয়ে থাকে। বিশেষত উঠতি বয়সী ছেলেদের দেহে টেস্টোস্টেরনের প্রভাবে বিশেষ ধরনের গন্ধ পাওয়া যায়।
পানির পরিমাণ
সুস্থতার জন্য পানি আবশ্যক। শরীরের গন্ধ সহনীয় রাখার জন্যও প্রয়োজন পানি। যাঁরা পর্যাপ্ত পানি খান, তাঁদের শরীরে উৎকট গন্ধ হওয়ার প্রবণতা কম থাকে।
খাবারের ধরন
-
পর্যাপ্ত পরিমাণে শসা, টমেটো, লাউ বা মিষ্টিকুমড়া খেলে আপনার শরীরে দুর্গন্ধ হওয়ার আশঙ্কা কম। শাক ও অন্যান্য সবজি, যাতে পর্যাপ্ত পানি থাকে, সেগুলো থেকেও পাবেন এই সুফল।
-
পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ বা গোলমরিচ খেলে কিংবা অন্যান্য মসলাসমৃদ্ধ খাবার খেলে দেহের গন্ধে পরিবর্তন আসে।
- বেশি পরিমাণে মাংস এবং অন্যান্য প্রাণিজ আমিষ খেলে শরীরের গন্ধ কিছুটা আলাদা হতে পারে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
শরীরের গন্ধ ঠিকঠাক রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। নিয়মিত গোসল করুন। গোসলের জন্য সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করা জরুরি নয়। ঘাম হলেই মুছে ফেলুন। প্রয়োজনে পোশাক বদলে নিন।
শেষ কথা
ত্বকের নিঃসরণের মাধ্যমে পানি ছাড়াও বহু ধরনের পদার্থ আমাদের দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। আর প্রত্যেকের ত্বকে স্বাভাবিকভাবেই কিছু জীবাণু থাকে। ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়া বিভিন্ন পদার্থের কিছু ক্রিয়া-বিক্রিয়া হয়, এসব জীবাণুর প্রভাবে। তাই বদলে যায় শরীরের গন্ধ। জিনগত দিক বা হরমোনের প্রভাবে আপনার দেহের স্বাভাবিক গন্ধ যেমন, তা তো আর বদলে ফেলা সম্ভব নয়। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলে গন্ধের পরিবর্তনটা অসহনীয় হয় না। বরং তা স্বাভাবিক ও সহনীয় রাখা সহজ হয়। মনে রাখতে হবে, কিছু ওষুধের কারণেও দেহের গন্ধ বদলে যেতে পারে। অ্যালকোহল গ্রহণ করলে সেটির প্রভাবেও এই পরিবর্তন আসে।