কথা ছিল সত্যজিৎ রায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বানাবেন
বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে যে কজন পরিচালক এসেছেন তাঁর মধ্যে সর্বকালের অন্যতম সেরা নির্দেশক সত্যজিৎ রায়। কেবল বাংলা চলচ্চিত্র নয় তাঁর কর্মদক্ষতা এবং তাঁর নির্মিত সিনেমা পুষ্ট করেছে সমগ্র ভারত তথা বিশ্বকে। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখলে এখনও সমান উজ্জ্বল এই নাম। সত্যজিৎ রায় এক বাঙালি কিংবদন্তী, যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বিশ্বদরবারে। কর্মজীবনে একইসাথে চিত্রনাট্য রচনা, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, সম্পাদনা, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ, লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তিনিই ছিলেন প্রথম অস্কারজয়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক। তার হাত ধরেই বাংলা সিনেমা বিশ্ব দরবারে পৌছেছিল। সত্যজিতের প্রথম ছবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ‘পথের পাঁচালী’। প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালীর জন্যই পেয়েছিলেন ১১টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যা বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলাই বাহুল্য।
১৯২১ সালের আজকের এই দিনে কলকাতার শিল্প-সাহিত্যচর্চায় খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দাদু এবং বাবা দুজনেই বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম ব্যাক্তিত্ব উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি এবং সুকুমার। মা সুপ্রভা রায়। সত্যজিতের মাত্র ৩ বছর বয়সে সুকুমার রায় মারা যান।
সত্যজিৎ রায় ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কার সহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ১৯৮৫ সালে দাদাসাহেব ফাল্কে পুরস্কার এবং ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক লিজিয়ন অফ অনারে সম্মানিত হন। ১৯৬৫ সালে পদ্মভূষণ এবং তার মৃত্যুর কিছু আগে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত হন। ১৯৯২ সালে তাঁর মৃত্যুর ১ মাস আগে তাঁকে সিনেমায় আজীবন তাঁর অবদানের জন্য ‘অস্কার’ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ঢাকায় এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়। তখন তিনি খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, গুণী কথাসাহিত্যিক। স্বাধীন দেশে সে বছর প্রথম পালিত হয় শহীদ দিবস। সত্যজিৎ রায়সহ ভারতের বেশ কজন শিল্পী, সাহিত্যিক, পরিচালক ঢাকায় এসেছিলেন। পল্টন ময়দানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। বলেছিলেন, ‘২০ বছর ধরে বাংলা ছবি করছি। বহুবার বহু জায়গা থেকে অনুরোধ এসেছে যেন বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা পরিত্যাগ করে অন্য দেশে, অন্য ভাষায় চিত্র রচনা করি। কিন্তু আমি সেই অনুরোধ বারবার প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমি জানি, আমার রক্তে যে ভাষা বইছে, সে হলো বাংলা ভাষা। সেই ভাষাকে বাদ দিয়ে অন্য ভাষায় কিছু করতে গেলে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে, আমি কূলকিনারা পাব না, শিল্পী হিসেবে মনের জোর হারাব।’ কথা ছিল সত্যজিৎ রায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বানাবেন। তবে সে সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
হাস্যকৌতুকের মোড়কে রাজনীতির কালো সত্যি বলায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সত্যজিতের অমোঘ সৃষ্টি ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’। ছোটদের জন্য তাঁর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’ কেবল শিশু নয় বড়দের কাছেও সমান পছন্দের। আবার তেমনই তৈরী করেছেন সমাজের কুসংস্কারের প্রতিবাদে ‘দেবী’ বা ‘অশনি সংকেত’-এর মতো সিনেমা। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে হিন্দি সিনেমাতেও তাঁর কাজ অমর হয়ে রয়েছে। ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’র মতো সিনেমা আজও তোলা রয়েছে দর্শকদের মনের মণিকোঠায়।
অন্যদিকে ১৯৭২ সালের এই দিনে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয় কলম্বিয়া, কোস্টারিকা এবং ভেনেজুয়েলা।
এছাড়া ১৯৭৫ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজ ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যাম। ১৫১৯ সালের এই দিনে ইতালীয় রেনেসাঁসের কালজয়ী চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি মৃত্যুবরণ করেন।