আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ঊর্ধ্বমুখী, দুর্বল হচ্ছে মার্কিন ডলার

মে ২০২৫:
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি আউন্স সোনার দাম ২.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৩১৭ মার্কিন ডলার। সোনার দর বৃদ্ধির বিপরীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ডলারের মূল্য দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে একাধিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি, ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সঙ্গে চলমান টানাপড়েন, এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের একটি বিমানবন্দরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানের ফলে অঞ্চলটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য—গ্রিনল্যান্ড দখলে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা—বৈশ্বিক বাজারে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

এ অবস্থায় সোনা হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আগামী ৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার নির্ধারণে বৈঠকে বসবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফেড চেয়ারম্যানের প্রতি ‘কঠোর’ মন্তব্য এবং সুদের হার কমাতে ফেড ওপেন মার্কেট কমিটিকে চাপ দেওয়ার আহ্বান সত্ত্বেও, ফেড তেমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না। শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জের ফেডওয়াচ টুল অনুযায়ী, মে মাসে সুদের হার কমার সম্ভাবনা মাত্র ৫.২ শতাংশ, তবে জুনে এই সম্ভাবনা বাড়বে ৪৬.৬ শতাংশ পর্যন্ত।

অন্যদিকে, ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ডলারের তুলনায় তাইওয়ান ডলারের মান ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। নিজেদের অর্থনীতিকে শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে তাইওয়ান নতুন পরিকল্পনার পথে হাঁটছে।

এছাড়া, সোনার খনির মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়েও চলছে বড় রকমের পুনর্বিন্যাস। ফিনান্সিয়াল রিভিউ জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সুটর গোল্ড ফিল্ডস বাজার স্থিতিশীল করতে গোল্ড রোড রিসোর্সেসকে ৩.৭ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণে সম্মত হয়েছে। এতে অংশীদার ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ডলার দুর্বল হওয়ায় সোনার দাম বাড়লেও সুদের হার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে তা সোনার বাজারের জন্য নেতিবাচক হতে পারে। কারণ, উচ্চ সুদের হারে বন্ডের রিটার্ন সোনার তুলনায় অধিক আকর্ষণীয় হয়।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন অর্থনীতি যদি আরও সংকুচিত হয়, তাহলে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। আর সে অবস্থায় সোনা হতে পারে একটি কার্যকর বিকল্প বিনিয়োগ মাধ্যম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা বিশ্বের শীর্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর—যেমন ফেডারেল রিজার্ভ, ইসিবি এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ড—প্রধান দায়িত্ব। সাধারণত ২ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্য ধরে রেখেই তারা তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।