মহাস্থানগড়ে শাহ সুলতান (রহ.)-এর স্মরণে বার্ষিক মেলা
বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এক বিশেষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা সুফি সাধক হযরত শাহ সুলতান মাহিসওয়ার বলখী (রহ.)-এর স্মরণে আয়োজন করা হয়। এদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য সাধু-সন্ন্যাসী, বাউল, ভক্ত এবং সাধারণ মানুষ মেলায় অংশ নিতে আসেন।
ভোরের আলো ফুটবার আগেই ভক্তরা এসে জড়ো হন। কেউ গান গেয়ে, কেউ নেচে, আবার কেউ একান্ত প্রার্থনায় মগ্ন হন। বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষ এই মিলনমেলায় একত্রিত হন, যা শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়; এটি লোকজ সংস্কৃতি ও সম্প্রীতিরও এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, বহু বছর আগে এই দিনে শাহ সুলতান (রহ.) মহাস্থানগড় জয় করেন এবং তৎকালীন অত্যাচারী শাসক পরশুরামের শাসনের অবসান ঘটে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এই দিনেই শাহ সুলতান (রহ.) ইন্তেকাল করেন, আবার কেউ বলেন, রাজকন্যা শিলা দেবী করতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মাজার এলাকাজুড়ে বসে বিশাল মেলা, যেখানে খাবার, খেলনা, ধর্মীয় সামগ্রীসহ নানা পণ্যের দোকান সাজানো হয়। এখানকার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি 'কটকটি' বেশ জনপ্রিয়, যা প্রায় সবাই কিনে নিয়ে যান। মাজারের পাশে ‘দুধ পাথর’ নামক স্থানে অনেকে দুধ ঢালেন আশা পূরণের প্রতীক হিসেবে। কেউ সেই দুধ পান করেন, আবার কেউ মানত করেন।
জয়পুরহাট থেকে আসা খলিলুর রহমান জানান, তিনি গত ৫০ বছর ধরে এই মেলায় আসছেন এবং প্রতিবছর মানুষের ভিড় বাড়তে দেখছেন। ফকির সাইফুল সাইজি নামের এক সাধু বলেন, "রাতভর ইবাদত করবো, সকালে জুমার নামাজ এবং আখেরি মোনাজাত শেষে ফিরে যাব।"
মাজার কমিটির একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছর লাখো ভক্ত এই মেলায় অংশ নেন। সারারাত ধরে চলে প্রার্থনা ও গান। পরদিন জুমার নামাজের মাধ্যমে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান জানান, মেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী কাজ করছে এবং স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।