জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা; আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সবাই নীরব
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ক্যাম্পাস ও বাইরে সংঘটিত বেআইনি এবং সহিংস ঘটনায় জড়িতদের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও জমা পড়েনি একটি অভিযোগও। ফলে তথ্য চেয়ে আবারও গণ-বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে এ গণ-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুনরায় তথ্য চেয়েছে প্রশাসন।
বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগকারীর তথ্য ও পরিচয় কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে রক্ষা করে জুলাই আন্দোলনে গতবছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জবি'র শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও এর বাইরে সংঘটিত বেআইনি এবং সহিংস ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে মে মাসের ২২ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া বরাবর তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগেও ২৮ এপ্রিল অভিযোগকারীর তথ্য ও পরিচয় কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে রক্ষার শর্তে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই আন্দোলনে গতবছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেআইনি এবং সহিংস ঘটনায় জড়িতদের তথ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও বিগত কোনো প্রশাসকের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য জমা দেয়নি কেউ। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগও পাইনি। এ কারণে আবারও সময় বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। যদি অভিযোগ না পড়ে তবে অন্যভাবে দেখতে হবে।’
অভিযোগ না দেওয়ার বিষয়ে যা বলছে ছাত্রসংগঠনগুলো:
জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগপত্র জমা দেয়নি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি, তবে খুব শিগগিরই তা জমা দিয়ে দেব।
শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে কোনো অভিযোগ দেইনি। অভিযোগ দেবো কি না তা আলোচনা করতে হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেকের দেওয়ার কথা। আমাদের মধ্যে কারা অভিযোগ দেবে তার খোঁজ নিতে হবে।
শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, আমরা এর আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ওইগুলো পুনরায় একত্রিত করে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই অভিযোগ জমা দেবো।
শাখা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ জমা দেয়নি। তবে তথ্য একত্রিত করে জমা দিয়ে দেবে।
নীরব ভূমিকায় সাদা দল:
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গতমাসে তথ্য চাওয়া হলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদাদল। দলের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংগঠনটি। তাদের বিরুদ্ধে দেয়নি কোনো অভিযোগও।
এবিষয়ে সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে বিদ্বেষমূলক মনোভাব তৈরি হবে। এটা বায়াস্ট হয়ে যায়। যদি কেউ দিতে চায় সেটা ব্যক্তিগতভাবে দেবে। কারও বিরুদ্ধে যদি কেউ অভিযোগ দেয় এবং তা সত্য হয়, তবে বিচার হওয়া প্রয়োজন।