সব ধরনের জুয়া হারাম

অনলাইনে সব ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে এ সপ্তাহে আইনটি চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

মঙ্গলবার (৬ মে) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব বলেন আইন উপদেষ্টা।

আইন উপদেষ্টা বলেন, নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। যা আগের আইনে ছিল না।

অনলাইনে জুয়া মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় নানা মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছিল, ঠিক এ সময়ে জুয়া নিষিদ্ধের খবরে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে অভিভাবক মহলে।

ইসলামে সব ধরনের জুয়া হারাম। তার পরও বিপদগামী কিছু মানুষ এ কাজে জড়িয়ে পরিবার ও সমাজে ধ্বংস ডেকে আনছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা কাম্য।

জুয়া খেলা কবিরা গুনাহ। জুয়া বলতে সেসব খেলাকে বোঝানো হয়, যাতে বাজি কিংবা হার-জিতের প্রশ্ন আছে। জুয়া যে ধরনেরই হোক না কেন, তা হারাম।এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! নিশ্চয়ই মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারির তীর- এসব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে। শয়তান তো এটা চায় যে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?’ -সুরা মায়িদা: ৯০-৯১

বর্ণিত আয়াতে জুয়াকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জুয়ার অনেক নতুন-পুরোনো ধরন আছে। এখানে জুয়ার কয়েকটি ধরনের কথা উল্লেখ করা হলো-

এক. লটারি বা ভাগ্যপরীক্ষা। অর্থের বিনিময়ে কোনো সংস্থা বা সংগঠনের প্রাইজ বন্ড খরিদ করে বেশি, সমপরিমাণ কিংবা কম মূল্যের পুরস্কার পাওয়া অথবা একেবারেই কিছু না পাওয়া। এ পন্থা একেবারেই হারাম। চাই ওই লটারির অর্থ জনকল্যাণে ব্যবহার হোক না কেন। কারণ পরকালের সওয়াব ইসলামের নিষিদ্ধ কোনো পন্থায় অর্জন করা যায় না।

দুই. জাহেলি যুগে ১০ জন লোক একত্রে মিলে একটি উট ক্রয় করত। প্রত্যেকেই সমানভাবে উট কেনার পয়সা পরিশোধ করত। কিন্তু জবাইয়ের পর তারা লটারির মাধ্যমে শুধু সাত ভাগ নির্ধারণ করে নিতো। আর বাকি তিনজনকে কিছুই দেওয়া হতো না। এটি হচ্ছে জুয়ার প্রাচীনরূপ।

তিন. কার্ডের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে জুয়া খেলা বর্তমান সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ, যা ছোট-বড় কারো অজানা নয়। শুধু এর মাধ্যমে মানুষের কত টাকা যে আজ পর্যন্ত বেহাত হয়েছে বা হচ্ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

চার. সব ধরনের বীমা কার্যকলাপও জুয়ার অন্তর্গত। জীবন বীমা, গাড়ি বীমা, বাড়ি বীমা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বীমা, বিশেষ কোনো পণ্যের বীমা, সাধারণ বীমা ইত্যাদি। এমনকি বর্তমানে গায়ক-গায়িকারা কণ্ঠস্বর বীমাও করে থাকে। বীমাগুলোতে ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণস্বরূপ টাকাপ্রাপ্তির আশায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা জমা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষতি সাধন হলেই ক্ষতি সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, নতুবা নয়। ক্ষতিপূরণ জমা দেওয়া টাকা থেকে কম, এর সমপরিমাণ অথবা তা থেকে অনেকগুণ বেশিও হয়ে থাকে।

পাঁচ. জায়েজ বা বৈধ খেলাধুলা খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে পুরস্কার সংবলিত হলে তা-ও জুয়ার অন্তর্গত। কিন্তু পুরস্কারটি তৃতীয় পক্ষ থেকে হলে তা অবশ্যই জায়েজ। তবে ইসলামের কোনো ফায়েদা আছে- এমন সব খেলাধুলা পুরস্কার সংবলিত হলেও তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আর ইসলামবিরোধী খেলাধুলা কোনোভাবেই জায়েজ নয়। চাই তাতে পুরস্কার থাকুক বা না থাকুক।