বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিদেশের মাটিতে সাক্ষাৎ ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন বাংলাদেশে দুই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান ও পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই দেখা যাচ্ছে।
রবিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেলজিয়াম সফরে যান জামায়াতের আমির ও নায়েবে আমির। সেখান থেকে লন্ডনে যান তারা।
জামায়াতে ইসলামীর তরফে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেওয়ার উদ্দেশ্যেই দেখা করেছেন তারা।
দলটির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে আগামীতে দুই দলের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
মতিউর রহমান আকন্দ সম্পর্ক ‘দৃঢ়’ করার প্রত্যাশা জানালেও, একসময়ের জোটসঙ্গী দুই দলের সম্পর্কে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধিতা, সমালোচনা ও বিতর্কই বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। ৫ অগাস্টের পর থেকে সংস্কার, নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধের মতো ইস্যুগুলোতে স্পষ্ট হয়েছে পরস্পরের মতভেদ। এমন প্রেক্ষাপটে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ রাজনীতির অঙ্গনে কৌতূহল তৈরি করেছে।
জামায়াতে ইসলামীর শফিকুর রহমানকে উদ্ধৃত করে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়ার ‘নৈতিক দায়িত্ব’ পালন করেছেন তারা। জামায়াত আমির ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে অনেক দিন কাজ করেছি। উনি অসুস্থ। ওনার খোঁজখবর নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বহুদিন পর আমাদের দেখা হয়েছে।আমরা ওনার জন্য দোয়া করেছি, ওনার কাছে দোয়া চেয়েছি।
বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি। তবে দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, এটিকে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবেই দেখছেন তারা। এর কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এটা তাদের মধ্যে মত পার্থক্য কমিয়ে আনার একটা চেষ্টা হতে পারে। তেমন চেষ্টা হয়ে থাকলে কয়েক দিন পরে এর প্রভাব বোঝা যাবে।
তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে কয়েক দিন পরে তারা পরস্পরের প্রতি বিষোদগার করছে কি না, যদি বিষোদগার কমে আসে তাহলে বুঝতে হবে এই সাক্ষাৎ ও বৈঠক একটা ভূমিকা রেখেছে।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ৫ অগাস্টের পর থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। বিএনপির সঙ্গে তার এক সময়ের মিত্র জামায়াতের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল কয়েক বছর ধরে। তার মধ্যেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে দুই দলকেই ব্যাপকভাবে সক্রিয় দেখা গেছে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগবিহীন মাঠে দল দুটির পুরনো টানাপড়েন ক্রমে স্পষ্ট হতে থাকে। বৈরিতার উপলক্ষ্য হয়ে ওঠে চলমান নানা ইস্যু।
ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দোষারোপ শুরু হয়। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে– এই প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়ে বিবাদে জড়ায় বিএনপি-জামায়াত।
নির্বাচনের সময় নিয়ে একে অপরের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি বাড়তে থাকে। গণ-অভ্যুত্থানে কৃতিত্ব নিয়েও পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় দল দুটি।