ভোলায় পুকুরে মুক্তা চাষ, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর গাজী গ্রামে পরীক্ষামূলক মুক্তা চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস)। বাস্তবে রূপকথার মতো মনে হওয়া এই উদ্যোগ ইতোমধ্যেই সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জিজেইউএস-এর কৃষি খামারে নিজেস্ব অর্থায়নে যশোর থেকে সংগ্রহ করা অল্পসংখ্যক ঝিনুক নিয়ে শুরু হয় এই পরীক্ষামূলক প্রকল্প। পুকুরের মাটি ও পানির গুণগত মান যাচাই করে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ঝিনুকে প্লাস্টিক নিউক্লিয়াস বা কৃত্রিম মুক্তা প্রতিস্থাপন করে পানির নির্দিষ্ট গভীরতায় ঝুড়িতে ডুবিয়ে রাখা হয়। প্রতিদিনের যত্ন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ফলে ঝিনুকের ভেতরে ধীরে ধীরে মুক্তার স্তর গঠিত হতে থাকে।

সাধারণত মুক্তা প্রস্তুত হতে ৯ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। তবে জিজেইউএস-এর তত্ত্বাবধানে মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই সফলতা আসে। পরিচর্যার অংশ হিসেবে প্রতি ১৫ দিন পর পর পুকুরে ইউরিয়া, পটাশ, ড্যাব ও খৈল ছিটিয়ে ঝিনুকের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি করা হয়। একই সঙ্গে পানি ও মাটির মান নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়, যাতে ঝিনুকের সুস্থ্য বৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়।

জিজেইউএস-এর পরিচালক (লিগ্যাল এডভোকেসি ও প্রোগ্রাম) এডভোকেট বীথি ইসলাম জানান, আমাদের এই পাইলট প্রকল্প সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা এই চাষ পদ্ধতি আমাদের সদস্য পর্যায়েও ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।

স্থানীয়দের মাঝেও এখন মুক্তা চাষের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অনেকেই ঝিনুক চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। ভোলা মৎস্য অধিদপ্তরের খামার ব্যবস্থাপক এ এইচ এম জাকির হোসেন বলেন, মুক্তা চাষে এই সফলতা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যেমন বাড়বে, তেমনি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগ দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং আত্মনির্ভরশীলতার পথ আরও প্রশস্ত করবে। সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর গাজীতে এই পরীক্ষামূলক মুক্তা চাষ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।