সয়াবিন তেলে ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি, আইনের বাস্তবায়নে গাফিলতি: জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে
ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় দেশে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা রয়েছে মারাত্মক পুষ্টিহীনতার শিকার। জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতিতে ভুগছে।
ভোজ্যতেলকে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সরকার ২০১৩ সালে একটি আইন প্রণয়ন করলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এই চিত্র তুলে ধরা হয়। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’।
সেমিনারে জানানো হয়, বাজারে থাকা মোট ভোজ্যতেলের প্রায় ৬৫ শতাংশই বিক্রি হয় ড্রামে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে ভিটামিন ‘এ’ একেবারেই নেই, ৩৪ শতাংশে প্রয়োজনের তুলনায় কম। মাত্র ৭ শতাংশ তেলেই আইন অনুযায়ী যথাযথ ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। এসব তথ্য উঠে আসে আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায়।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, নন-ফুড গ্রেড ড্রামে খোলা তেল সংরক্ষণ ও বাজারজাত করার ফলে তেলে ভিটামিন থাকে না, আবার এতে ভেজালের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এসব ড্রাম সাধারণত কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট কিংবা শিল্পপণ্য বহনের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিএসটিআই’র উপ-পরিচালক এসএম আবু সাঈদ, জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, সাবেক সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, ব্র্যাক পাবলিক হেলথ স্কুলের আবু আহমেদ শামীম, সাংবাদিক মোর্শেদ নোমান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের জুলাইয়ে খোলা সয়াবিন এবং ডিসেম্বর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাত নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। ফলে নিরাপদ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের দাবি জানান বক্তারা।
তারা বলেন, ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব শিশুদের অন্ধত্ব, গর্ভবতী মায়েদের মাতৃমৃত্যু ও নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি রিকেটস, হাড় ক্ষয় এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে। ভোজ্যতেল সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে এই ঘাটতি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া আলো প্রতিরোধী প্যাকেজিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, সাধারণ প্লাস্টিক বোতলে রক্ষিত তেল সূর্যালোকের সংস্পর্শে পুষ্টি হারায়। তাই অস্বচ্ছ, আলো প্রতিরোধী প্যাকেজিং বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।
এসএফ