টাকা নিয়ে আ’লীগ এমপির পিএসকে ছেড়ে দিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা
টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি তানভীর ইমামের পিএস শওকত ওসমানকে ছেড়ে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবু হোসেন অভি, শাহ জালাল, শাহরিয়ার আহমেদসহ তাদের অনুসারিরা।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার দুইবারের এমপি তানভীর ইমাম। পিতা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এইচটি ইমামের ছেলে। আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৪ সালে ভোটরবিহীন নির্বাচন ও ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচনে এমপি হন তিনি। তানভীর ইমামের ১০ বছর উল্লাপাড়া হয়ে ওঠে আতঙ্কের জনপদ। তার হয়ে যারা শান্তির জনপদকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেন, তাদের অন্যতম ইঞ্জিনিয়ার শওকত ওসমান। পরপর দুইবার তাকে উপজেলার সলপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানানো হয়। এমপি তানভীরের অবর্তমানে তিনিই ছিলেন উল্লাপাড়ার অঘোষিত এমপি।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কিছুদিন লুকিয়ে ছিলেন শওকত ওসমান। এখন তিনি নিজ বাসা, অফিসেই সময় কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে ঘুরছে। যেখানে দেখা যায়, কয়কজন যুবক শওকত ওসমানকে মারধর করতে করতে বাসার ভেতর নিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাচ্ছে। তাদের একজনের হাতে ব্যাগ।
জানা যায়, ঘটনাটি গত ৪ ফেব্রুয়ারির। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে শওকত অভিযোগ দিয়েছেন গত ১৬ এপ্রিল।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘বিগত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ নিম্মলিখিত ব্যক্তিদ্বয় উল্লাপাড়া অগ্রণী ব্যাংকের উপর তলায় আমার একটা ভাড়া নেয়া ঠিকাদারী অফিস কাম বাসা রয়েছে। সেই বাসায় আবু হোসেন অভি, বয়স: ৩৫, পিতা: আব্দুল কাদের মোল্লা, গ্রাম: রামকান্তপুর, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ এবং তার ভাই অলি হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন বাসার কেচি গেটের তালা ভেঙে আমার বাসায় ঢুকে পড়ে। উল্লেখ্য কেচি গেটের তালা বন্ধ রেখে আমি ভিতরে অবস্থান করছিলাম চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে। কেচি গেটের শব্দ পাওয়ায় আমি বের হয়ে আসি। তখনই তারা ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং মারধর করতে করতে ভিতরের রুমগুলোতে আমাকে নিয়ে যায়।’’
অভিযোগে তিনি বলেন, ‘‘বিগত জানুয়ারি মাসে ৪৯.৫ শতাংশ জমি আমি বিক্রি করেছিলাম সাবরেজিস্টার সাহেবকে কমিশন করে। আমার ওই ভাড়া বাসায় জমি বিক্রির ২০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা আর আমার কাছে পূর্ব থেকে রক্ষিত ৩ লাখ টাকার কাছাকাছি ছিল। এর থেকে ২৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা অভিযুক্তরা নিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় ১০ হাজার টাকা আমার বেডের উপরে ফেলে যায়। উল্লেখ্য যে, তাদের ব্যবহৃত জ্যাকেট, প্যান্টের পকেট ও ব্যাগে করে টাকাগুলো নিয়ে যায় যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়।’’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘দুঃখ ও লজ্জার সাথে বলতে হয় যে, ৫ আগস্ট সবকিছু লুটপাটের সময় আমার তিনটা মোবাইল সেট নিয়ে যায় অভির ভাই অলি।’’
১০ জনের নাম উল্লেখ করে শওকত অভিযোগ দেন। এতে তিনি আরো বলেন, অভি ছাড়াও ঠিকাদরি অফিসে উপজেলা ছাত্রদল যুগ্ম আহবায়ক শাহ জালাল ও মৎস্যজীবী দল নেতা শাহরিয়ার আহমেদ ছিলেন। অন্যরা তাদের অনুসারি।
জানা যায়, আবু হোসেন অভি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক। শুক্রবার তার পদ স্থগিত করেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা কমিটি।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল ওহাব বলেন, শওকত ওসমান এলাকার বিরোধী মতের অনুসারীদের উপর দমন-পীড়ন করেছে। ৫ তারিখের আগে আমি এলাকায় আসতে পারিনি। ভিডিওর বিষয় তিনি বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) রাকিবুল হাসানের কাছে শওকত ওসমানের নামে কোনো মামলা আছে কিনা না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না দেখে বলতে পারব না। আপনি ৩০ মিনিট পরে ফোন দেন। পরে তিনি জানান, শওকত ওসমানের নামে আমাদের থানায় কোনো মামলা নেই।