অনলাইন জুয়া বন্ধের নির্দেশ কেন নয়? হাইকোর্টের রুল
বাংলাদেশ হাইকোর্ট অনলাইন জুয়া ও এর বিজ্ঞাপন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার (৪ মে) বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে এই রুল জারি করেন।
আদালত অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত সব ইন্টারনেট গেটওয়ে, লিংক, অ্যাপ্লিকেশন এবং বিজ্ঞাপন গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, বিগোলাইভ, টিকটক, লাইকি, গুগল প্লেস্টোরসহ সকল ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে অপসারণে সরকারকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। এছাড়া, ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন হলফনামা আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত আরও জানতে চেয়েছেন, অনলাইন জুয়া বন্ধে এবং জড়িতদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না। এই রুলের জবাব দিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লবের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন 'ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট' এই রিটটি দায়ের করেন। রিটে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুয়া খেলা বেআইনি এবং অপরাধ। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তার কারণে অনলাইন জুয়া মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৫০ লাখ লোক অনলাইন জুয়ায় আসক্ত।
রিটে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের নামিদামি সেলিব্রেটি এবং শোবিজ মডেল ও তারকারা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ এবং অ্যাকাউন্টে টাকার বিনিময়ে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। এর ফলে, অনেক টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়া তাদের পেজে বিভিন্ন জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে, যা দেশের যুবসমাজকে বিপথে পরিচালিত করছে।
১৮৬৭ সালের ব্রিটিশ আমলে প্রণীত জুয়া নিষিদ্ধকরণ আইন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ৯২ ধারা, দণ্ডবিধির ২৯৪-এ এবং ২৯৪-বি ধারায় যেকোনো ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র যেকোনো ধরনের জুয়া প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে হবে। এছাড়া, অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে স্পেশাল মনিটরিং সেল গঠন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন।
এই রুল জারির মাধ্যমে অনলাইন জুয়া বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পথ সুগম হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।