কার্টুনে বিদ্রুপ, পোস্টে উপলব্ধি—পরিবর্তনের আভাস?

উন্মুক্ত মঞ্চ। উৎসবমুখর পরিবেশ। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উত্তোলিত হাতের করতালিতে গর্জে উঠছে বিজয়ের আবহ। ঠিক যেন কোনো প্রতিযোগিতার মঞ্চ, যেখানে বিজয়ীর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিজয়ের মুকুট।

তবে এখানে মুকুটটি ধানের শীষের, আর পরিয়ে দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া—তারই ছেলে তারেক রহমানের মাথায়।

 

এটি ছিল একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন, আঁকা হয়েছিল ২০০৯ সালে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে। ওই সময়ে দলটির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রহীনতাকে বিদ্রুপ করে এটি এঁকেছিলেন জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট মেহেদী হক। সেই সময়ে কার্টুনটি ছিল এক ধরনের প্রতিবাদ—একটি রাজনৈতিক দলের ভেতরের স্বচ্ছতার অভাবকে তুলে ধরার সৃজনশীল প্রয়াস।

১৬ বছর পর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সেই পুরনো ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনটিই হঠাৎ করে শেয়ার করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে। বিস্ময়ের পাশাপাশি এতে এক ধরনের ভিন্ন বার্তার আভাস মিলেছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে এবং প্রশংসাও কুড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে।

তারেক রহমান পোস্টটিতে লিখেছেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে জনগণের সেবা করাই উচিত।’ একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়েছেন গণতান্ত্রিক সমাজে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও সততার প্রয়োজনীয়তার ওপর।

লিখেছেন, ‘একটি শক্তিশালী ও টেকসই গণতন্ত্র গড়ে তুলতে হলে সাংবাদিকতার সততা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেই হবে।’ আরো বলেছেন, ‘সাংবাদিকরা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেন; তাদের কাজকে সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত, আক্রমণ বা সেন্সর নয়।’

 

তার বক্তব্য নিঃসন্দেহে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণাদায়ী বার্তা। তবে আরো তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো—যে কার্টুনটি একদিন তাকে ও তার দলকে বিদ্রুপ করেছিল, সেই কার্টুনকেই আজ তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে নিজেই শেয়ার করেছেন। এই খোলা মনোভাব, অতীতকে স্বীকার করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা, একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিণত ভাবনারই ইঙ্গিত দেয়।

তবে কথা ও কাজের মধ্যে সংযোগ না থাকলে, এমন বার্তাগুলো অনেক সময়েই জনগণের কাছে ফাঁকা বুলি হয়ে ওঠে। তাই আমরা আশাবাদী, এই উপলব্ধি যদি সত্যিই তারেক রহমানের মধ্যে গড়ে উঠে থাকে—তবে তা যেন কেবল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং ভবিষ্যতে, যদি তিনি বা তার দল কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসেন, তখন যেন এই বোধ ও প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়।

রাজনীতিতে পরিণত মনোভাব, গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের মর্যাদা এবং অতীতকে ছাড়িয়ে ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি—এই তিনটির সমন্বয়েই গড়ে ওঠে একটি দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। আজকের পোস্টে তারেক রহমান সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন দেখার অপেক্ষা—এটি শুধু বার্তার ভাষায় থেমে থাকে, নাকি ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কাজের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটে।