শিল্পকলা একাডেমি চলছে মহাপরিচালক ছাড়াই

সংগৃহীত

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগের পর গত দুই মাসে একাডেমির পরিচালনা পরিষদের কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। বর্তমানে একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে একাডেমির কার্যক্রম এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় চলছে। এতে একাডেমির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিষদের সদস্যরা। আজাদ আবুল কালাম বলেন, "জামিল আহমেদ মহাপরিচালক থাকাকালে যে পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যক্রম নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা হয়েছিল, কিন্তু এখন সেগুলো স্থগিত রয়েছে।"

শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী, পরিষদের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন হওয়া উচিত, কারণ পরিষদই একাডেমির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ। কিন্তু বর্তমানে মহাপরিচালক না থাকায়, একাডেমির পরিকল্পনাগুলো মন্ত্রণালয়ের দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে। একাডেমির কার্যক্রম সাধারণত পরিষদের অনুমোদন পেয়ে কার্যকর হয়, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিষদ কার্যকরী নয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন মাস পর পর পরিষদের সভা হওয়ার কথা থাকলেও, জুলাইয়ের পর সদস্য পরিবর্তনের কারণে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র একবার। এর আগেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শিল্পকলা একাডেমি নিয়মিত পরিষদ সভা আয়োজন করেনি, বিশেষ করে দুর্নীতিগ্রস্ত মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সেসময়।

তবে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের পর শিল্পকলা একাডেমি বেশ কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, যেমন ডিসেম্বরে সারা দেশে একযোগে জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব, কাওয়ালি সন্ধ্যা, গণ-অভ্যুত্থানের গান, আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ, সাপ্তাহিক বাহাস সিরিজ এবং ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া জেলায় জেলায় শিল্পীদের জন্য গবেষণা বৃত্তি ঘোষণা ও প্রস্তাব আহ্বানসহ আরও অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ‘তারুণ্যের উৎসব’ আয়োজন করা হয়, যেখানে ৫০টি জেলায় নৃত্যানুষ্ঠান, রাজশাহীতে আল্পনাচিত্র প্রদর্শনী, ১৩টি জাতিগোষ্ঠীর নৃত্য, গীত ও নাট্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। একই মাসে অ্যাক্রবেটিক প্রদর্শনী, ষষ্ঠ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী, 'জুলাই অভ্যুত্থান' শীর্ষক প্রদর্শনী, রাখাইন ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ, ব্যান্ডসংগীত, ভাববিনিময় সভা, সাধুমেলা আয়োজন করা হয়। জানুয়ারিতে 'অষ্টাদশ জাতীয় পিঠা উৎসব'ও অনুষ্ঠিত হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসে শিল্পকলা একাডেমি ‘বহুভাষিক উৎসব’ আয়োজন করে, যার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় বহুভাষিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মনীষী স্মরণ অনুষ্ঠান, ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক লেকচার ওয়ার্কশপ, শিশু-কিশোরদের আলোকচিত্র কর্মশালা, শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব, পথনাট্য উৎসব এবং 'মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব' আয়োজন করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি এই নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে সৈয়দ জামিল আহমেদ পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন। তার পদত্যাগের পর একাডেমি ঈদের আগের দিন চাঁদ রাতের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এরপর এপ্রিল মাসে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে কনসার্ট, ড্রোন শো, সাধুমেলা ও লোকনাট্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, এবং মার্চে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও হয়েছিল।