গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত, আরও ৩৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে স্থল আক্রমণ বাড়িয়েছে ইসরায়েল। বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ হামলার পর গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার জন্য আর কোনো জায়গা নেই বলে জানিয়েছেন মেডিকেল ডিরেক্টর। খবর আল জাজিরার।

 

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল নতুন করে আক্রমণ শুরুর পর থেকে গাজার বিভিন্ন অঞ্চল দখলের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিমান হামলাও জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েল লেবানন এবং সিরিয়ার ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে। দক্ষিণ লেবাননের সিডন শহরে এক হামলায় একজন হামাস কমান্ডার এবং তার ছেলে নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।

আরব নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, গাজায় স্থল সেনারা 'নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারণের জন্য' শুজাইয়া এলাকায় অভিযান শুরু করেছে। নাসের হাসপাতালের একটি মেডিকেল সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, খান ইউনিসে একটি ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছে।

 

এলেনা হেলস টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে এএফপিকে বলেন, 'পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক এবং প্রতিটি দিক থেকে আমাদের দিকে মৃত্যু আসছে।' তিনি আরও বলেন, তিনি এবং তার পরিবার শুজাইয়ায় তার বোনের বাড়িতে আটকা পড়েছেন।

নেতানিয়াহুর উগ্র ইহুদিবাদি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গত বুধবার বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজা উপত্যকার ভেতরে সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করবে এবং হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস এবং গাজার বিভিন্ন এলাকা খালি করবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিশাল এলাকা দখল করা হবে, যা 'ইসরায়েলি নিরাপত্তা অঞ্চল' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

 

নেতানিয়াহু বলেছেন, সেনাবাহিনী গাজাকে বিভক্ত করছে এবং 'অঞ্চল দখল' করছে, যাতে হামাসের কাছে আটক বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করতে বাধ্য করা যায়।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করা একটি স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ৩১ জন নিহত হয়েছে।

 

সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেন, গাজা শহরের উত্তর-পূর্বে আল-তুফাহ পাড়ার দার আল-আরকাম স্কুলে হামলায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েকজন নিখোঁজদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ছিলেন, যিনি যমজ সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছিলেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ ইসরায়েল তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করার পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ১,২৪৯ জন নিহত হয়েছে, যার ফলে মোট নিহতের সংখ্যা ৫০,৬০৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

’গাজায় প্রতিদিন ১০০ শিশু হতাহত হচ্ছে’

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ শিশু হতাহত হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি। একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশুদের ওপর। প্রতিদিনের হতাহত সংখ্যা যে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়।

কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজা এখন এক ধরনের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং অনেক পরিবার হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনদের।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় যেসব এলাকাকে নতুন করে ইসরায়েলি সামরিক উচ্ছেদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে, সেসব এলাকায় থাকা অন্য বন্দিদের অধিকাংশই এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তারা বলেছে, নতুন অভিযানের কারণে গাজার শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালালে সেখানে কমপক্ষে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে, যা আজ পর্যন্ত থামেনি। এভাবে গাজার উপর যুদ্ধের ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে।