খালেদা জিয়ার সাথে ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৪ মে লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরবেন। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে একই ফ্লাইটে দেশে ফিরতে যাচ্ছেন তারেক রহমানের স্ত্রী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ জুবাইদা রহমান। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেকের সঙ্গে লন্ডন যাত্রার পর ১৭ বছর তাঁর দেশে প্রত্যাবর্তন হয়নি। জানা গেছে, আগামী ৫ মে (সোমবার) সকালেই উড়োজাহাজটি ঢাকায় অবতরণ করবে।
দলের পক্ষ থেকে এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নেত্রীর প্রত্যাবর্তন শুধু রাজনৈতিক ইভেন্ট নয়, বরং ভালোবাসা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তিনি জানান, ইতোমধ্যে গুলশানের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে যেন সাধারণ মানুষ শৃঙ্খলা রক্ষায় রেখে নেত্রীর আগমনে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো যানজট সৃষ্টি না করে এক হাতে জাতীয় পতাকা ও অপর হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে নেত্রীর আগমনকে শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে। দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার সাথে দেশে ফেরা জুবাইদার বিষয়টি দলীয় নেতাদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করেছে।
জুবাইদার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা চলছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, দলের অভ্যন্তরে অনেকের ধারণা, তার রাজনীতিতে আসার ফলে বিএনপির গতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। কিছু শীর্ষ নেতা মনে করছেন, জিয়া পরিবারের পরবর্তী নার্সন রাজনীতিতে পা রাখতে পারেন। দলের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেছেন, পারিবারিক পটভূমি বিবেচনায় জুবাইদা ইতিমধ্যে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তবে সরাসরি অংশগ্রহণ জনগণের দাবি এবং সময়ের ওপর নির্ভর করবে। এই ইস্যুতে দলীয় এক সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও আলোচনা চলছে, তবে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো পাওয়া যায়নি।
জুবাইদার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের দায়েরকৃত দুর্নীতি মামলার বিচার ২০২৩ সালে সম্পন্ন হয়। ঢাকার আদালত ২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এই রায়ের ফলে সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে। কার্যত, নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে (আদালতে আত্মসমর্পণ ও আপিল করলে) এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
পেশাগত ও পারিবারিকভাবে ডা. জুবাইদা একজন উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসক। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তিনি সাবেক নৌবাহিনী প্রধান Rear Admiral প্রয়াত মাহবুব আলীর কন্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর ভাগ্নী। ১৯৯৪ সালে তারেকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘমেয়াদে লন্ডনে যান।
এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার স্বাক্ষরিত আইজিপি বরাবর একটি চিঠিতে জুবাইদার নিরাপত্তার চারস্তর ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তিনি ডি. এইচ.এল. (ধানমন্ডি) এর বাড়িতে অবস্থান করবেন এবং ‘গানম্যান’ সশস্ত্র বাহিনী, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশন, বাড়িতে পুলিশ পাহারা ও প্রবেশপথের আর্চওয়ে স্থাপনের মতো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন। এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু তিনি জিয়া পরিবারের সদস্য ও তারেকের স্ত্রী হিসেবে জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন, তাই ঢাকায় অবস্থান ও চলাচলের সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিএনপির এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে নজর কাড়ছে। ডা. জুবাইদার দেশে প্রত্যাবর্তন কাল, দলের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি বাহিনী ও দলের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় চলছে। খালেদা জিয়ার এই সফরে তার নিরাপদ ফেরার দিকে তাকিয়ে দলীয় নেতারা জনমত ও ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে চমক অপেক্ষা করছেন।