ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সাংবিধানিক সংস্কার ও স্থানীয় সরকার নিয়ে প্রস্তাব দিল এনসিপি

জাতীয় সংসদের বিভিন্ন আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ইলেক্টোরাল কলেজ, জেলা কাউন্সিলের ভোট, দলীয় মতের বাইরে ভোটাধিকারসহ নানামুখী প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ২টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সরোয়ার তুষার এসব প্রস্তাবনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ও কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসেন।

সরোয়ার তুষার জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ ও দ্বিকক্ষভিত্তিক সংসদ গঠনের পর ৬৪টি জেলা কাউন্সিলের প্রতিনিধি ভোট দেবেন—এই প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে এনসিপি। তারা এই নির্বাচকমণ্ডলীর আওতা আরও বাড়িয়ে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশও করেছে।

সংসদের সদস্যদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সরোয়ার তুষার বলেন, অর্থবিল ও অনাস্থা ভোট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোটদানের পক্ষে তারা মত দিয়েছে। তিনি জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কার্যকারিতা সীমিত করা যায় কি না, তা কমিশন তাদের বিবেচনায় নিতে বলেছে। এনসিপি বলেছে—তারা এ বিষয়ে তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রেখেছে, অর্থাৎ সংসদ সদস্যরা চাইলে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন।

এছাড়া, কমিশনের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে এনসিপি কয়েকটি বিষয়ে আরও মতামত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম, নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিতায় সংসদীয় কমিটির পরিবর্তে জুডিশিয়াল রিভিউ ব্যবস্থা, এবং সংবিধান সংশোধনে গণভোটের বিধানসহ দুই কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের শর্ত।

এনসিপি ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে আলাদা বিভাগে উন্নীত করার সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়েছে বলেও জানান সরোয়ার তুষার। তবে তারা প্রাদেশিক সরকার গঠনের বিপক্ষে মত দিয়েছে। তাদের মতে, এই মুহূর্তে প্রাদেশিক সরকার ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বরং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেই দক্ষ ও শক্তিশালী করা উচিত।

সংসদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবের পক্ষে মত দেয় এনসিপি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের মামলা গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশের বিরোধিতা করে তারা জানিয়েছে, বিচারিক ক্ষমতা বিচার বিভাগের কাছেই থাকা উচিত।

এছাড়া এনসিপি জেলা পরিষদ বিলুপ্তকরণ এবং চেয়ারম্যান পদ বাতিলের বিরোধিতা করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত করার এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছে দলটি। তারা মনে করে, দলীয় প্রতীক ব্যবহারের ফলে স্থানীয় নির্বাচনে সহিংসতা বাড়ে, যা বিগত সরকার প্রবর্তিত একটি অবাঞ্ছিত দিক।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আয়কর বর্ষে সম্পদের হিসাব বাধ্যতামূলকভাবে দাখিল করার প্রস্তাবও এনসিপি দিয়েছে। তারা আরও প্রস্তাব করেছে, নিম্নকক্ষে ১০০ জন সদস্য সরাসরি নির্বাচিত হবেন এবং উচ্চকক্ষেও ১০০ আসনের মধ্যে ২৫ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

বৈঠকটি সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় এবং সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এনসিপির পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাবনা কমিশনের হাতে তুলে দেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এনসিপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার ও জাবেদ রাসিন।