নিষেধাজ্ঞা মানতে পারছেন না, হতাশায় ভুগছেন আ'লীগের কর্মী-সমর্থকরা
আওয়ামী লীগ সংকটে: নিষেধাজ্ঞা ও সাইবার নজরদারিতে নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা
বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বর্তমানে এক গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। দলটির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরুর আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলটির সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু মাঠের রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও এটি প্রভাব ফেলেছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাইবার জগতে আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের প্রচার, সংগঠন বা কার্যক্রম কঠোরভাবে রোধ করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা পড়েছেন চরম হতাশায়। একসময় যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় প্রচারে সক্রিয় ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন চুপচাপ। অনেক নেতাকর্মী তাদের ফেসবুক টাইমলাইন, ইউটিউব চ্যানেল, কিংবা টেলিগ্রাম গ্রুপের কনটেন্ট গোপন করেছেন বা মুছে ফেলেছেন। কারণ, সাইবার গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কঠোর।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের শুধু সাংগঠনিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও দুর্বল করে দিয়েছে। আমরা বুঝে উঠতে পারছি না—এখন কোন পথে এগোবো।"
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক তরুণ নেতা বলেন, "আমরা কোনো দিক থেকেই সংগঠিত হতে পারছি না। এমনকি নিজের মতও প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছি। কারণ এখন অনলাইনে কিছু বললেই গ্রেপ্তার বা নজরদারির শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে।"
আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ, যেগুলোর মাধ্যমে আগে দলীয় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হতো, এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। কয়েকটি গ্রুপ প্রশাসনিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সেল। দলটির সমর্থনে চালু থাকা ইউটিউব চ্যানেলগুলোর ওপরও নজরদারি চলছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, শুধুমাত্র দলীয় নামেই নয়—আওয়ামী লীগের ভাবধারা বা প্রচারণামূলক কনটেন্ট ছড়ালে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, "যেহেতু বিচারাধীন মামলায় দলটি নিষিদ্ধ, তাই আইনের চোখে এখন তাদের পক্ষ নেওয়া মানে বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা।"
সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন নেতৃত্বহীনতা, সাংগঠনিক জড়তা এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার এক বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। মাঠে নামার সুযোগ নেই, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মও নজরদারিতে—এদের মাঝেই তাদের টিকে থাকার লড়াই শুরু হয়েছে। তবে কতদূর তারা যেতে পারবেন, তা নির্ভর করছে বিচারপ্রক্রিয়ার গতিপথ এবং আগামী দিনের রাজনীতির গতিপ্রবাহের ওপর।