ইনিংস ব্যবধানে জয়, অনন্য কীর্তি মিরাজের
সাগরিকায় দিনটা রাঙিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চাপের মুখে সেঞ্চুরি করার পর বল হাতে নিয়েছেন ৫ উইকেট। মিরাজময় দিনে জিম্বাবুয়েকে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় দুবছর পর ঘরের মাঠে টেস্ট জিতল টাইগাররা। সঙ্গে রোডেশিয়ানদের বিপক্ষে ১-১ ব্যাবধানে সিরিজ শেষ করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
টাইগাররা ঘরের মাঠে সবশেষ টেস্ট জিতেছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে, সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। পরে ঘরে টানা ৬ টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি, সাউথ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি করে এবং চলতি সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হেরে ঘরে সপ্তম ম্যাচে এসে আবার টেস্ট জিতল বাংলাদেশ।
সাগরিকায় ১০৪ রানের ইনিংস খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট ও ২০০০ রানের মাইলফলক পূর্ণ করেছেন। মিরাজের আগে টাইগারদের মধ্যে এই মাইলফলকে পৌঁছেছেন কেবল সাকিব আল হাসান, ৫৪ ম্যাচে। সাকিবের চেয়ে ১ ম্যাচ কম খেলে কীর্তিটি গড়েছেন মিরাজ ২৬তম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে।
মিরাজ এরপর বল হাতে নেন ৫ উইকেট। সেঞ্চুরি করে বড় লিড এনে দেয়ার পর বোলিংয়ে ঘুর্ণিজাদুতে বাজিমাত করেছেন তিনি। একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে ৫ বা ততোধিক উইকেট শিকারের এলিট ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন। চট্টগ্রামে তার কীর্তির আগে টেস্টে দুই বাংলাদেশি একই কীর্তি গড়েছেন। মিরাজের আগে সাকিব আল হাসান দুবার এবং সোহাগ গাজী একবার এই অর্জনে নাম লিখিয়েছেন। সাকিবের আছে টেস্টে সেঞ্চুরির সঙ্গে ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তিও।
চট্টগ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাটে নেমেছিল জিম্বাবুয়ে। ২২৭ রানে রোডেশিয়ানদের প্রথম ইনিংস থামে। জবাবে নেমে ৪৪৪ রানে থামে টাইগারদের প্রথম ইনিংসে। টাইগাররা লিড নিয়েছিল ২১৭ রানের। জবাবে নেমে ৪৬.১ ওভার ব্যাট করে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১১ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
চা বিরতির কিছুক্ষণ আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটে নামে জিম্বাবুয়ে। তাইজুলের জোড়া শিকারে ৮ রানে ২ উইকেট হারায়। চা বিরতির পর নেমে ২২ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় দলটি। নাঈম হাসানের শিকার হন শন উইলিয়ামস।
ক্রেইগ আরভিন ও বেন কারেন মিলে যোগ করেন ৪৭ রান। পরে জোড়া উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেটির পরের ওভারে বলে এসে মিরাজ তৃতীয় শিকারের দেখা পান। ফেরান তাফাদজোয়া সিগাকে। ৩৮তম ওভারে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে চতুর্থ শিকার বানান তিনি। মাসাকাদজা ১০ রান করেন। পরের ওভারে এসে বেন কারেনকে পঞ্চম শিকার বানান মিরাজ।
১০০ রান পার করার পর নবম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এনগারাভাকে ফেরান তাইজুল। পরে মাসেকেসা রানআউট হলে ১১১ রানে থামে রোডেশিয়ানদের ইনিংস।
মিরাজ ২১.১ ওভার বল করে ৩২ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন। তাইজুল ১৬.২ ওভারে ৪২ রান খরচয় নেন ৩ উইকেট। নাঈম ১ উইকেট নেন।
বুধবার সকালে ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে ব্যাটে নামেন মিরাজ ও তাইজুল। তৃতীয় দিনের শুরুটা ভালো এনে দেন দুজনে। ৫১ রান যোগ করেন তারা। দলীয় ৩৪২ রানে তাইজুল ফিরে গেলে ভাঙে ৬৩ রানের জুটি। পরে তানজিম সাকিবকে নিয়ে ৯৬ রানের দুর্দান্ত জুটিতে বাংলাদেশের লিড দুইশ পার করেন মিরাজ।
দলীয় ৪৩৮ রানে তানজিম ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। অভিষিক্ত তরুণ ৮০ বলে ৪১ রান করেন। ছিল দুটি চার ও একটি ছক্কার মার। পরে হাসান মাহমুদকে নিয়ে নিজের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিরাজ। ২০২১ সালে এই মাঠেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
মাসেকেসার পঞ্চম শিকার হয়ে ফিরে যান মিরাজ। ৪৪৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ১১টি চার ও ১ ছক্কায় ১৬২ বলে ১০৪ রান করেন মিরাজ।
এর আগে দ্বিতীয় দিনে সেঞ্চুরি করেন সাদমান ইসলাম। ১২০ রান করেন বাংলাদেশ ওপেনার। সাদমানেরও দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। মুশফিকুর রহিম ৪০ রান, এনামুল হক বিজয় ৩৯ রান এবং মুমিনুল হক ৩৩ রান করেছেন।
রোডেশিয়ানদের হয়ে অভিষিক্ত ভিনসেন্ট মাসেকেসা ৫ উইকেট নেন। ব্রায়ান বেনেট, ব্লেসিং মুজারাবানি, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও ওয়েসলি মাধেভেরে একটি করে উইকেট নেন।