১ রানে জিতে প্লে-অফের দরজা খোলা রাখল কেকেআর
ফুটবল স্টেডিয়ামে প্রিয় দলের সমর্থনে ‘টিফো’ নামানো ভারতে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে ক্রিকেট মাঠে সাধারণত ‘টিফো’ দেখা যায় না। রবিবার দুপুরে ইডেন গার্ডেন্সে দেখা গেল। বিশালাকায় আন্দ্রে রাসেলের টিফো নামানো হল দর্শকাসন থেকে। তাতে লেখা, ‘দ্য মাইটি নাইট’। অর্থাৎ পরাক্রমশালী যোদ্ধা। ম্যাচ শুরুর আগে সেই টিফো হয়তো রাসেলের চোখে পড়েছিল। তাই রবিবার রাজস্থান ম্যাচকেই ফর্মে ফেরার ম্যাচ হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার। রিয়ান পরাগের দাপট সত্ত্বেও ইডেনে কেকেআর হারাল রাজস্থানকে। জিতল ১ রানে।
রাজস্থান ম্যাচের আগে রাসেলকে নিয়ে কারও কোনও আগ্রহই ছিল না। যাবতীয় আলোচনা, নজর যাকে নিয়ে, সে বিপক্ষ দলের এক ১৪ বছরের ক্রিকেটার। বৈভব সূর্যবংশী। তবে দিনের শেষে নজর কেড়ে নিয়ে রাসেল বোঝালেন, বুড়ো হাড়ে এখনও জোর কমেনি। তাঁকে নিয়ে আলোচনা হোক না হোক, চাইলে এখনও ইডেনের গ্যালারিতে অনায়াসে বল ফেলতে পারেন। এ দিন ছ’বার দেখা গিয়েছে সেই দৃশ্য। আরও দু’-এক বার হতে হতে হয়নি।
এই রাসেলেরই আইপিএলটা গত দেড় মাসে কতটা খারাপ গিয়েছে! কেন তাঁকে ধরে রাখা হয়েছে, কেন তাঁকে প্রতি ম্যাচে খেলানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রায় প্রতিটি সাংবাদিক বৈঠকেই জবাব দিতে হয়েছে কাউকে না কাউকে। রাসেলকে বসিয়ে দেওয়া, এমনকি দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও উঠেছে। রাসেল কেকেআরের বোঝা— এমন কথাও শোনা গিয়েছে।
তবে কেকেআর বরাবরের মতোই আস্থা রেখেছে রাসেলের উপর। এখনও পর্যন্ত একটি ম্যাচেও তাঁকে বসানো হয়নি। রাসেলের উপর যাতে চাপ কমে, তাই দু’টি ম্যাচে রভমান পাওয়েলকে খেলানো হয়েছে। কেকেআরের সেই আস্থার দাম পাওয়া গেল শনিবার।
শুরুটা দেখে বোঝা যায়নি ঝড় উঠবে। প্রথম পাঁচটি বলে রানই করতে পারেননি। ষষ্ঠ বলে রান পান। ইডেনে তখন ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছে, ‘রাসেল কখন আউট হবে?’
ইডেনের ঈশান কোণে কালো মেঘ জমলেও ঝড় ওঠেনি। মাঠের ভেতরে অবশ্য রাসেলের ঝড় টের পাওয়া গিয়েছে। আকাশ মাধোয়ালকে চার মেরে শুরু। এর পর আর খুচরো রানের রাস্তায় হাঁটেননি রাসেল। মাহিশ থাকশানা টানা তিনটি ছয় মারেন। মরসুমের প্রথম অর্ধশতরানও করে ফেলেন। তাঁর ক্যাচও পড়ে ১৯তম ওভারে।
চলতি মরসুমে রাসেলের ব্যাট না চললেও, বল হাতে খারাপ খেলেননি। যত বার বল করতে এসেছেন, অন্তত একটি উইকেট নিয়েছেন। এত দিন বোলার হিসাবে তাঁকে কাজে লাগানো হয়েছে দরকার মতো। এ দিনও তাই হল। ১৯তম ওভারে বিশ্বস্ত সেনার হাতে বল তুলে দিলেন অজিঙ্ক রাহানে। উইকেট না পেলেও রাসেল মাত্র ১১ রান দিলেন সেই ওভারে। ওটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল।
কেকেআরের ইনিংস শেষ হওয়ার পরও জানা ছিল না, ইডেনে আর একটা ঝড় উঠবে। তবে সেই ঝড় বৈভবের নয়, এল রিয়ানের ব্যাট থেকে। রাসেলের মতো রাজস্থানের অধিনায়কও তো মরসুম জুড়ে শুধু সমালোচিতই হয়েছেন। না ছিল ব্যাট হাতে রান, না করেছেন বোলিং। সঞ্জু স্যামসনের বদলে অধিনায়কের দায়িত্ব শুধু পালন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে স্বজনপোষণের অভিযোগও। বাবা অসম ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বলে রিয়ান বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
তবে প্রতিভা থাকলে তা সহজে বিনাশ হয় না। দলের বিপদের সময় একাই কুম্ভ হয়ে দাঁড়ালেন রিয়ান। ইডেন দেখতে চেয়েছিল বৈভবের মারকাটারি ইনিংস। রিয়ান বুঝিয়ে দিলেন, তিনিও ফুরিয়ে যাননি। শুরু থেকে চালিয়ে খেলেছেন। যে মইন আলি দু’ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়েছিলেন, সেই বোলারকেই টানা পাঁচটি ছয় মারলেন। পরের ওভারে বরুণ চক্রবর্তীকে আরও একটি। অর্থাৎ টানা ছ’টি ছয়।
যে রোগ গোটা মরসুমে ভুগিয়েছে রাজস্থানকে, সেই রোগে আরও এক বার আক্রান্ত হল তারা। শেষ দিকে এসে দিশাহীন ব্যাটিং। এর আগে দু’টি ম্যাচে ৬ বলে ৯ রান তুলতে পারেনি রাজস্থান। এ দিন রিয়ান ক্রিজ়ে থাকলে হাসতে হাসতে ম্যাচ জিততে পারত তারা। সেই রিয়ান অকারণে একটি শট তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন।
তার পরেও ম্যাচ প্রায় বার করে ফেলেছিল রাজস্থান। বলা ভাল, সেই কাজে রাজস্থানকে ‘সাহায্য’ করেছিলেন বৈভব অরোরা। শেষ ওভারে ২২ রান দরকার ছিল। বৈভবকে চার, ছয়, চার মেরেছিলেন শুভম দুবে। এক বলে দরকার ছিল তিন। বৈভবের ইয়র্কারে এক রানের বেশি নিতে পারেনি রাজস্থান।
জিতে মূল্যবান দু’পয়েন্ট কেকেআরকে আপাতত প্লে-অফের দৌড়ে রাখল। তবে হাসতে হাসতে জেতা ম্যাচও যদি এ ভাবে শেষ মুহূর্তে এসে জিততে হয়, তা হলে চিন্তায় বিষয় বই কি!