কতদিন স্থগিত থাকবে আইপিএল , জানাল বিসিসিআই
ভারত-পাকিস্তানের চলমান সংঘাতের ফলে দুই দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি গুরুতরভাবে অবনতি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। এই কারণে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এর বাকি অংশ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিসিআই) ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এর বাকি ম্যাচগুলো সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে বিসিসিআই জানিয়েছে, আইপিএল পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি, বরং এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী সপ্তাহেই ম্যাচগুলো পুনরায় শুরু হতে পারে। মূলত ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিসিসিআই-এর সচিব দেবজিত সাইকিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আইপিএলের চলমান আসর তাৎক্ষণিকভাবে এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে টুর্নামেন্টের নতুন সময়সূচি এবং ভেন্যু নিয়ে পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।’
সাইকিয়া আরও বলেন, ‘সব প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেই আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তাদের খেলোয়াড়দের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, পাশাপাশি সম্প্রচারকারী, স্পনসর এবং সমর্থকদের প্রতিক্রিয়াও বিবেচনা করা হয়েছে। বিসিসিআই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতার প্রতি আস্থাশীল থাকলেও, অংশীদারদের সুরক্ষা এবং সম্মিলিত স্বার্থে এই পদক্ষেপকে যথাযথ মনে করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিকেট আমাদের জাতীয় আবেগ হলেও, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার চেয়ে বড় কিছু নয়। বিসিসিআই সব সময় জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।’
বৃহস্পতিবার পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে ধর্মশালায় চলমান ম্যাচটি পাকিস্তানের হামলার পর প্রথম ইনিংসের মাঝপথে বাতিল করা হয়। ধর্মশালা ও আশেপাশের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ থাকায় খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের বাসে করে জালন্ধর এবং সেখান থেকে ট্রেনে দিল্লি পৌঁছানো হয়। একদিন পর আইপিএলের আসর সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা আসে।
স্টেডিয়ামে থাকা এক চিয়ারলিডার সামাজিক মাধ্যমে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি জানান, ‘মাঝপথে পুরো স্টেডিয়াম খালি করা হয়। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সবাই চিৎকার করছিল—বোমা আসছে। এখনও ভয় লাগছে। আমি জানি না কেন কাঁদছি না, হয়তো আমি এখনও শকে আছি।’
সম্প্রতি পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর ভারত পাকিস্তান ও নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়, যার জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করে। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।
এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৫৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ধর্মশালার একটি ম্যাচ বাতিল করা হয়। গ্রুপ পর্যায়ে আরও ১২টি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এসব ম্যাচ লখনৌ (২টি), হায়দরাবাদ, আহমেদাবাদ (৩টি), দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু (২টি), মুম্বাই, জয়পুরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। প্লে-অফের ম্যাচগুলো হায়দরাবাদ ও কলকাতায় হওয়ার কথা ছিল, আর ফাইনাল হওয়ার কথা ছিল ২৫ মে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে।
তবে, যদি নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, বিসিসিআই বিকল্প চিন্তা করছে। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপ বাতিল হলে, সেই সময় আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজন করার পরিকল্পনাও রয়েছে।