টিকটকের ভাগ্য নির্ধারণে হোয়াইট হাউজে মিটিং
আমেরিকায় নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে লড়ছে চীনের বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে নিজেদের আমেরিকা অংশের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে তাঁদেরকে। ফলে ৫ এপ্রিল সময়য়সীমার আগেই টিকটককে খুঁজে নিতে হবে চীনের বাইরের (নন-চাইনিজ) এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যারা অ্যাপটির আমেরিকা অপারেশনস কিনে নিতে ইচ্ছুক। অন্যথায় দেশটিতে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে ১৭ কোটি আমেরিকান ব্যবহারকারীর এই অ্যাপটি। এই প্রেক্ষাপটে টিকটকের ভাগ্য নির্ধারণে হোয়াইট হাউজে আজ (বুধবার) এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওভাল অফিসে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের। তাঁদের মধ্যে আছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, বাণিজ্য মন্ত্রী (কমার্স সেক্রেটারি) হাওয়ার্ড লুটনিক, জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের। হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে। উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউজের আসন্ন এই বৈঠক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজও।
টিকটক নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট
গত বছর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষরিত জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত এক আইনে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে টিকটক। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির মধ্য নিজেদের চীনা মালিকানায় পরিবর্ত আনার কথা ছিল তাঁদের, যেটা তাঁরা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এক্ষেত্রে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সুফল পায়নি অ্যাপটি।
তবে ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পরপরই টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময়সীমা ৭৫ দিন পিছিয়ে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্ধিত ৭৫ দিনের সময়সীমা শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ৫ এপ্রিল। ফলে টিকটকের ভাগ্য নিয়ে আবারও নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প নিজেই টিকটক নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে এসে টিকটক ইস্যুতে তাঁর সুর কিছুটা নরম হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। নির্বাহী আদেশে অ্যাপটিকে ৭৫ দিনের অতিরিক্ত সময় প্রদানের মাধ্যমেই তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গত রবিবার (৩০ মার্চ) ট্রাম্প দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন যে, ৫ এপ্রিলের আগেই অ্যাপটির মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের সাথে টিকটকের আমেরিকা অংশের ব্যবসা বিক্রি সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদিত হবে।
নিজেদের আমেরিকা বিজনেস বিক্রি করতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে টিকটক। এক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগামী ৫ এপ্রিলের সময়সীমাকে সামনে রেখে ট্রাম্প আজ টিকটক বিক্রি সম্পর্কিত চূড়ান্ত একটি প্রস্তাব বিবেচনা করবেন বলেও জানা গেছে।
টিকটকের আমেরিকা বিজনেস কিনতে আলোচনায় আছেন যারা
বাইটড্যান্সের বর্তমান নন-চাইনিজ শেয়ারহোল্ডারদের শীর্ষে আছে সাসকুয়েহানা ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ ও জেনারেল আটলানটিক। এবার তাঁদের সাথে কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হতে যাচ্ছে তা নিয়েই চলছে ব্যাপক আলোচনা।
বেসরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকস্টোন টিকটকের আমেরিকা ব্যবসার ছোট একটি শেয়ার কিনতে আগ্রহী বলে গত শুক্রবার জানিয়েছে রয়টার্স।
ওরাকলসহ একদল আমেরিকান বিনিয়োগকারী টিকটকের আমেরিকা বিজনেস কিনে নিতে ইচ্ছুক বলেও জানা গেছে এবং অনেকদিক ধরেই হোয়াইট হাউজের মধ্যস্থতায় তাঁরা টিকটকের মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের সাথে আলোচনা চালিয়ে আসছেন। বিনিয়োগকারীদের দলে আছেন আমেরিকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান অ্যানড্রিসেন হরোউইটজ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক অ্যানড্রিসেনও।
বর্তমানে টিকটকের নন-চাইনিজ শেয়ারহোল্ডার যারা আছেন তাঁদের শেয়ারের পরিমাণ বাড়িয়েও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাথে বাইটড্যান্সের আলোচনাও অব্যাহত আছে বলে গত মাসে জানিয়েছে রয়টার্স।
উল্লেখ্য, গত মাসেই ট্রাম্প বলেছেন যে, টিকটকের আমেরিকা অংশের ব্যবসা কিনতে ইচ্ছুক এমন চারটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের সাথে তাঁর প্রশাসন আলোচনা করছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিশ্বব্যাপী টিকটকের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে ব্যবসায়িক আয়ের দিক থেকে আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ এক বাজার এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপটির জন্য। তবে দেশটিতে ব্যবসা করতে হলে নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে আমেরিকানদের হাতেই। দ্বিধাহীনভাবে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে ট্রাম্প সরকার।