মালয়েশিয়ায় চলছে ধরপাকড়, গ্রেপ্তার আতঙ্কে হাজারো বাংলাদেশি প্রবাসী

দুই বছর আগে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশের মাহবুবুর রহমান। দালালের আশ্বাসে ভালো কাজের প্রত্যাশায় দেশ ত্যাগ করলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে যে কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, সেখানে না নিয়ে একটি কক্ষে দীর্ঘদিন বন্দি করে রাখা হয়। পরে তাকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে নিয়োজিত করা হয়।

বর্তমানে মাহবুবুর রহমান মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীর মতো কাজ করছেন। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রতিদিনের অভিযানে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে আছেন তিনি। কেবল মাহবুবুর নন, এমন পরিস্থিতিতে রয়েছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী, যারা কলিং বা ভিজিট ভিসায় গিয়ে বৈধতার বাইরে চলে গেছেন।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ দেশজুড়ে 'টার্গেটেড স্ট্রাইক অপারেশন' শুরু করেছে। বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন, শিল্প কারখানা, হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাসা-বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গত কয়েক দিনের এসব অভিযানে অন্তত ৪৫০ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গত বুধবার (৭ মার্চ) কুয়ালালামপুরের একটি কনডোমিনিয়ামের নির্মাণ স্থানে ৪১ জন এবং পেরাক রাজ্যে ৬৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৬ মে পর্যন্ত সময়কালে ৩০ হাজার ৯৯৩ জন বিদেশির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ ও আশ্রয় দেওয়ার দায়ে ৬৩৪ জন নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি প্রবাসীরা অভিযোগ করছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হওয়ার সম্ভাবনায় একটি অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা অবৈধ অভিবাসীদের ধরিয়ে দিচ্ছে—যাতে নতুন করে লোক পাঠিয়ে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করা যায়। অথচ যারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে রয়েছেন, তাদের বৈধতা দেওয়ার ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা দালালদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় এসেছি। এখন অবৈধ হয়ে প্রতিদিন গ্রেপ্তারের ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। অনুরোধ করছি, চলতি মাসে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার বৈঠকে যেন আমাদের বৈধতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়। নয়তো আমাদের জীবন অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।”